Coronavirus in Kolkata

কঠিন সময়েও লাভ অ্যাপ-বাইকের

গণপরিবহণের ভিড় এড়িয়ে অনেকেই এখন নিরাপদ ও তুলনামূলক ভাবে সস্তা কোনও উপায়ে পৌঁছতে চাইছেন অফিসে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৪:০৮
Share:

ছবি:শাটারস্টক

করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীর অভাবে সঙ্কটে পড়েছিলেন অ্যাপ-ক্যাব চালকেরা। কিন্তু সেই সঙ্কটকালই আবার খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার দরজা।

Advertisement

আনলক-পর্বে খুলে গিয়েছে বহু অফিসকাছারি। গণপরিবহণের ভিড় এড়িয়ে অনেকেই এখন নিরাপদ ও তুলনামূলক ভাবে সস্তা কোনও উপায়ে পৌঁছতে চাইছেন অফিসে। আর এ জন্য তাঁরা বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার মোটরবাইক পরিষেবা।

এই মোটরবাইকের চাহিদা এখন এতটাই যে, ক্যাবচালকদের কেউ কেউ বাড়িতে পড়ে থাকা বাইক নিয়ে নিজেরাই অন্য সংস্থায় অ্যাকাউন্ট খুলে যাত্রী পরিবহণের কাজ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, যে সংস্থায় গাড়ি নথিভুক্ত রয়েছে, সেখান থেকে ওই চালককে বাইক বা অন্য গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। কিন্তু অন্য সংস্থায় অ্যাকাউন্ট খোলায় অসুবিধা নেই।

Advertisement

লকডাউনে চাকরি খোয়ানো অনেক যুবকও এখন বাইকে যাত্রী পরিবহণের কাজ করছেন। মেট্রো বন্ধ। সংক্রমণ এড়াতে বহু যাত্রীই বাসে উঠছেন না। কলকাতা ও শহরতলির একাধিক রুটে অটোয় দু’জন করে যাত্রী নেওয়া হলেও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি, একাধিক বার অটো বদলের ঝামেলাও রয়েছে। অ্যাপ-বাইকে সেই ঝক্কি নেই।

বাইকচালকদের আয়ের হারও ক্যাবচালকদের তুলনায় বেশি। তাঁদের দাবি, পেট্রল ও ডিজ়েলের দামে এখন বিশেষ ফারাক নেই। বাইকে এক লিটার পেট্রল ভরলে ক্যাবের চেয়ে আড়াই-তিন গুণ বেশি দূরত্ব যাওয়া যায়। একটি ক্যাব যেখানে এক লিটার ডিজ়েল পুড়িয়ে ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরত্ব যায়, সেখানে বাইক বা স্কুটার গড়ে ৫০-৫৫ কিলোমিটার যেতে পারে। অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা ট্রিপ-পিছু যে কমিশন গাড়ির মালিকের কাছ থেকে নেয়, সেটির হারও বাইকের ক্ষেত্রে কিছুটা কম।

সারা দিন বাইক চালিয়ে অনেকেই দিনে ৭৫০-১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। যাঁরা খুব ভাল চালান, তাঁদের আয় আরও একটু বেশি। বেহালার বাসিন্দা, একটি কুরিয়র সংস্থার প্রাক্তন কর্মী প্রসেনজিৎ সাহা বললেন, ‘‘বাইক চালানোটা শিখেছিলাম বলে লকডাউনের সময়ে দুটো পয়সা বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি। না-হলে চাকরি হারিয়ে ঘরে বসে থাকতে হত।’’

কিন্তু সংক্রমণ ঠেকাতে কি কোনও ব্যবস্থা থাকছে? চালকদের দাবি, নিয়মিত যাত্রীদের অনেকেই নিজেরা হেলমেট নিয়ে আসছেন। কারও হেলমেট না থাকলে যাত্রীর সামনেই চালকেরা হেলমেট স্যানিটাইজ় করার পাশাপাশি শাওয়ার ক্যাপও দিচ্ছেন। যাত্রা শেষে যাত্রীরা ওই ক্যাপ ফেলে দিচ্ছেন।

যাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, চালকের মাথায় হেলমেট থাকায় মাথা ও মুখ ঢাকা থাকছে। ক্যাবের মতো বদ্ধ জায়গা না-হওয়ায় বাইকে ড্রপলেট থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও কম বলে মনে করছেন তাঁরা। চালকেরাও দ্রুত ট্রিপ শেষ করতে ঘিঞ্জি, ব্যস্ত এবং সিগন্যাল-বহুল রাস্তা এড়িয়ে চলছেন।

তবে চালকেরা সকলেই যে নিয়ম মানছেন, তা নয়। বেশির ভাগ বাইকই বাণিজ্যিক লাইসেন্স ছাড়া চলছে বলে অভিযোগ। পুলিশ ধরলে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার নজরদারি নেই। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে চালকেরা অনেক ক্ষেত্রেই বড় রাস্তার মোড় থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে যাত্রী তুলছেন। চাহিদা বাড়ায় অ্যাপ-বাইকের সংখ্যা গত কয়েক মাসে ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়েছে বলে খবর। এই কঠিন সময়ে মন্দা আর সর্বনাশের মধ্যেও আশার আলো দেখছেন বাইকচালকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement