Anubhav Singh

প্রত্যয়ই তাঁর দায়বদ্ধতার অনুভব

উত্তর-সত্য আর ধামাধরা টিভি চ্যানেলের রমরমার যুগে সংবাদপত্রই যে তাঁকে ‘মুল্ক’-এর গল্পটা দিয়েছিল, অস্বীকার করলেন না অনুভব।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০২:০২
Share:

বক্তা: নন্দনে পরিচালক অনুভব সিংহ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

‘‘কনভিকশন! আপনি নিজে কী করতে চান, কী বলতে চান তা নিয়ে আপনি প্রত্যয়ী কি না, সেটাই আসল।’’

Advertisement

শনিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পরিচালক অনুভব সিংহের সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতার সারাৎসার এটাই।

এই উৎসবেই দেখানো হচ্ছে ঋষি কপূরকে নায়ক করে তাঁর ছবি ‘মুল্ক’। বারাণসীর এক মুসলিম পরিবারের বয়োবৃদ্ধ গৃহকর্তা কী ভাবে তাঁর সন্ত্রাসবাদী ছেলের মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন, তাই নিয়ে ছবি। ‘‘আমার জন্ম বারাণসীতে, বড় হয়েছি ইলাহাবাদে, পড়াশোনা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে এই বিষয়টা আমি জানতাম, এটা নিয়ে ‘কনভিকশন’ ছিল,’’ বললেন অনুভব।

Advertisement

উত্তর-সত্য আর ধামাধরা টিভি চ্যানেলের রমরমার যুগে সংবাদপত্রই যে তাঁকে ‘মুল্ক’-এর গল্পটা দিয়েছিল, অস্বীকার করলেন না অনুভব। ‘‘কানপুরের ঘটনা, ওটা খবরের কাগজে বেরিয়েছিল। তখনই গল্পটা ভেবে ফেলি। কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে বলি। পরিচালক সুধীর মিশ্র বাদে অনেকেই গল্পটা নস্যাৎ করে দিয়ে বলেছিলেন, দূর, এ নিয়ে ছবি হয় নাকি! সুজিত সরকার আর সুজয় ঘোষের মতো বাঙালি পরিচালক বন্ধুরা বলেন, ‘না, এটাই ছবি করো।’ ফলে এক দিন রাত সাড়ে তিনটে অবধি গল্পটা লিখে সবাইকে মেল করে দিই। সে দিন ওই গল্পটা নিয়ে আমার ‘কনভিকশন’ না থাকলে রাত তিনটে অবধি জেগে গল্পটা খাড়া করতে পারতাম না,’’ অকপট পরিচালক।

অতঃপর আয়ুষ্মান খুরানাকে নিয়ে ‘আর্টিকল ফিফটিন’। ‘‘তুমি কী?’’ আইপিএস নায়কের প্রশ্নের জবাবে কেউ বলে সে ব্রাহ্মণ, কেউ চামার। জাতপাতে দীর্ণ ভারত এক নিমেষে তখন উন্মোচিত হয়ে যায় সিনেমার পর্দায়। ‘‘মেনস্ট্রিম ছবি আর আঞ্চলিক ছবি মানে?’’ ধারালো প্রশ্ন অনুভবের। ‘‘বলিউডের হিন্দি ছবি মানে ব্রাহ্মণ, আর বাকি আঞ্চলিক ভাষার ছবি নিচু জাত? এর চেয়ে হলিউডের স্টুডিয়ো সিস্টেম তো ভাল। সেখানে ‘টাইটানিক’ বরং গণতান্ত্রিক ভাবে তৈরি হয়!’’ ‘সদগতি’ ছবির পরিচালকের নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতায় এ ভাবেই সরব হলেন অনুভব।

না, সত্যজিতের ‘সদগতি’ বা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’— কোনও ছবিরই নাম করেননি অনুভব। দরকারও ছিল না। ‘মেনস্ট্রিম ছবিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা’ নিয়ে তাঁর বক্তৃতা। অনুভব প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে ব্যাখ্যা করলেন। মেনস্ট্রিম মানে কী? শুধুই বলিউড? তা হলে তামিলনাড়ুতে তৈরি কমল হাসন অভিনীত ‘নায়কন’কে কী বলবেন? প্রশ্ন তাঁর। কে না জানে, অনুভব আজকাল টুইটারে তাঁর নিজের পরিচিতি লেখেন ‘অনুভব সিংহ, নট বলিউড’ বলে! লকডাউনের মাঝে তাঁর সেই টুইট সমর্থন করে সুধীর মিশ্রও লিখেছিলেন, ‘বলিউড আবার কী? আমরা সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, রাজ কপূর, গুরু দত্ত, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় থেকে জি অরবিন্দনের ছবির ভাষায় প্রেরণা পেয়েছি।’

অনুভবও সেই পথের পথিক। ‘থাপ্পড়’ ছবি নিয়ে তাঁর টিমই সংশয়ে ছিল, রাগের মাথায় একটা থাপ্পড় মারার জন্য স্বামীকে ছেড়ে নায়িকা চলে যাবে? স্বামীর আর কোনও ভিলেনি দেখানো হবে না? কিন্তু অনুভবের ‘কনভিকশন’ ছিল, ‘‘না, জোর করে ভিলেনি দেখানোর দরকার নেই। ওটাই রোজকার গল্প।’’

রোজকার গল্পে এত ‘কনভিকশন’ আসে কোথা থেকে? রোজকার ঘটনা থেকেই আসে। ঠিক যে ভাবে আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যে এই ‘কনভিকশন’ দেখতে পান অনুভব। কৃষকদের মৃত্যু তাঁকে বিহ্বল করে। পরিচালক এর পর দ্বিতীয় এবং শেষ জরুরি কথাটি বললেন। তিনি চান, দর্শকরাই দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলুন, আলোচনা করুন। আলোচনাই মুক্তি দিতে পারে, নইলে সমস্যা সমাধানের সবখোল চাবি তাঁর অজানা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement