হাঁসফাঁস: ভিড়ে ঠাসা মেট্রোর কামরা। বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
প্রতি দিনই কোনও না কোনও বিভ্রাট ঘটে চলেছে মেট্রোয়। কখনও যান্ত্রিক ত্রুটিতে আটকে থাকছে পরিষেবা, কখনও বা ইচ্ছেমতো দেরি করে চলছে ট্রেন। সম্প্রতি মেট্রোর বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগে এবং অন্য এক ঘটনায় মেট্রোর একটি রেক লাইনচ্যুতও হয়। সেই সঙ্গে নিয়মিত বিনা ঘোষণায় ট্রেন বাতিল তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বেহাল এ শহরের মেট্রো পরিষেবা। যার জেরে নিত্য নাজেহাল হচ্ছেন ব্যস্ত সময়ে অফিস, স্কুল বা কলেজমুখী যাত্রীরা। ইদানীং মেট্রোর সব চেয়ে বড় সমস্যা সম্ভবত সময়ে না চলা। যে সময়ানুবর্তিতা নিয়ে এক সময়ে মেট্রোর কর্তারা গর্ব করতেন, আজ সেই পরিষেবার নিয়ম ভাঙা সময়সূচিতে বিরক্ত যাত্রীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেরিতে ট্রেন আসা কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একাধিক ট্রেন বাতিল হয়ে যাওয়ার সমস্যা। বুধবার
সারা দিনই ভোগায় ট্রেন বাতিলের সমস্যা। অনেক সময়েই একটি বা দু’টি ট্রেন বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে তো বটেই, এমনকী দুপুরেও উপচে পড়ে ভিড়। বুধবার রাতে দমদমমুখী শেষ ট্রেনটি প্রায়
২০ মিনিট দেরিতে আসে। কিন্তু মেট্রোর তরফে এ নিয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি বলে জানাচ্ছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যস্ত সময়েও একই সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। ট্রেন বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমে যায়। মেট্রোর তরফে শুধু সবাইকে একসঙ্গে ট্রেনে উঠতে বারণ করে ঘোষণা করা হয়। যাত্রীরা জানাচ্ছেন যেটুকু ঘোষণা করা হচ্ছে, সেটাও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কানে শুনে কিছু বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য,
মেট্রো চলাচলে কোনও অসুবিধা তৈরি হলে যাত্রীদের তা জানানো হোক।
গত মাসেই পার্ক স্ট্রিটের কাছে মেট্রোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফর্মারে আগুন ধরে যায়। বিনা ঘোষণায় ট্রেন বাতিল হওয়ার ঘটনাকেও আগুন লাগার জের বলেই দাবি করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যদিও যাত্রীরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ওই ঘটনার আগে থেকেই ট্রেন বাতিলের সমস্যা চলছিল। মাঝে পরিস্থিতির কিছুটা বদল হলেও ফের গোলমাল শুরু হয় মেট্রোয়। এর মধ্যেই সোমবার রাতে দমদমের
ওয়াই সাইডিংয়ে একটি রেক লাইনচ্যুত হওয়ায় নতুন করে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। কর্তাদের দাবি, ‘‘মেট্রো চলছে সময় মেনেই।’’ মেট্রোর একটি সূত্র
অবশ্য জানাচ্ছে, নোয়াপাড়া কারশেডে ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণে দেরি হচ্ছে।
ফলে ট্রেন ছাড়ছে দেরিতে। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত ট্র্যাকশনের জন্য পার্ক স্ট্রিট এবং যতীন দাস পার্ক স্টেশনের মধ্যে ট্রেন স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর গতিতে চলছে। ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে
এর জন্যও। বাড়তে বাড়তে দিনের শেষে গিয়ে এই দেরি দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে।
মেট্রো কর্তাদের একাংশ মানছেন, কলকাতা মেট্রোয় কর্মী-সংখ্যা দেশের অন্যান্য মেট্রোর থেকে বেশি। দেশের অন্য শহরে মেট্রো পরিষেবা যখন তীব্র বেগে ছুটছে, তখন যাত্রী বাড়লেও কলকাতা মেট্রো ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। মেট্রোকর্তা ও কর্মীদের একাংশের মতে, কর্মসংস্কৃতির অভাবেই এই অবস্থা।