প্রতাপ সাহা
ফের হামলার ঘটনায় জড়িয়ে গেল পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের নাম। গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের নির্বাচন ঘিরে গোলমালে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর মৃত্যুর পরে যেমন ববির ঘনিষ্ঠ পুর-নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না অভিযুক্ত হন, তেমনই শুক্রবার আলিপুর থানায় ঢুকে পুলিশকে মারার পিছনেও অভিযোগের আঙুল স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ববির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে।
প্রতাপ ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের নব রায় লেনের বাসিন্দা, দক্ষিণ কলকাতা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। এলাকার দু’টি বস্তি সংগঠনের নেতা। এ দিন সরকারি জমি জবরদখল করা যে বস্তি উচ্ছেদ করতে যায় প্রশাসন, সেখানে সংগঠনের সভাপতিও প্রতাপ। এলাকায় এই দাপুটে নেতা ফিরহাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হলেও মন্ত্রী নিজে তা অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ও কোনও দিনও আমার ঘনিষ্ঠ ছিল না। অসভ্য ছেলেদের আমি পছন্দ করি না।” যদিও দক্ষিণ কলকাতার চেতালা অঞ্চলে ফিরহাদ হাকিম ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হোর্ডিংয়ের নীচে প্রতাপ সাহার নাম খুবই চেনা দৃশ্য।
স্থানীয়রা বলেন, এলাকায় ববি এলেই সর্বদা পাশে থাকেন প্রতাপ। ববি শুধু মন্ত্রীই নন, ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। পাশেই ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন প্রতাপ। অনেকের মন্তব্য, বিজি প্রেসের কর্মী প্রতাপই বকলমে ওই দুই ওয়ার্ডের আসল কাউন্সিলর।
বছর দুই আগে খিদিরপুরে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর ঘটনায় মুন্নার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও তাঁকে গ্রেফতার করার সাহস দেখায়নি পুলিশ। এ দিন প্রতাপের ক্ষেত্রেও কার্যত একই রকম আচরণ। প্রতাপের নেতৃত্বে থানায় হামলার পরে তাঁকে ধরেনি পুলিশ। বরং লালবাজারের পুলিশকর্তারা গিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আর্জি জানিয়ে আলোচনায় বসেন প্রতাপেরই সঙ্গে। ঠিক যেমন তাপসবাবু খুনের পরে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে মুন্নাকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিল পুলিশ।
আলিপুর গোপালনগর লাগোয়া ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে ঘুরলেই প্রতাপের দাপট মালুম হয়। সেখানে পুর-উন্নয়ন থেকে দলীয় অনুষ্ঠান, সবই কার্যত প্রতাপের নেতৃত্বে হয়ে থাকে। তৃণমূলের লোকেরাও বলেন, মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে প্রতাপকে কেউ ঘাঁটাতে সাহস পায় না। পুলিশও নয়।
এ ক্ষেত্রেও ছবিটা বন্দর এলাকার মতোই। ফিরহাদ ঘনিষ্ঠ মুন্নাকে ঘাঁটাতে সাহস পেত না পুলিশ। পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরী খুনের পরে মুন্না এই ঘটনায় জড়িত নয় বলে প্রকাশ্য বিবৃতি দেন মন্ত্রী ফিরহাদ। কিন্তু পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুন্নাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তবে জামিনে মুক্ত মুন্না এলাকায় ফিরে স্বমহিমায়।
শুক্রবার আলিপুর থানায় হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামল দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় আলিপুরের এক তৃণমূল নেতার কটাক্ষ, “পুলিশ সব জেনেও প্রতাপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে সাহস দেখাল না। যেখানে তাঁরা নিজেরাই আক্রান্ত।” ওই নেতার সংযোজন, “বেশ কয়েক বার দলীয় কর্মীদের মারধর করেছিল প্রতাপ। দিদির বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতাপের প্রভাব-প্রতিপত্তি কমেনি।” তবে এ দিনের হামলার বিষয়ে রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ওই ঘটনাটা কিছুই জানি না। আরামবাগে একটি বৈঠকে ছিলাম। খোঁজ নিচ্ছি।” তবে এ দিনের ঘটনার পরে প্রতাপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মন্ত্রী ফিরহাদ অবশ্য বলেন, “অন্যায় করলে আইন আইনের পথে চলবে।” সেই সঙ্গেই যোগ করে দেন, “আমি থানায় খোঁজ নিয়েছি। ওসি বলছেন, সে রকম কিছু ঘটেনি।”