প্রতীকী ছবি।
জলাশয় ভরাট হওয়া রুখতে নাগরিকদের বারংবার সচেতন করার চেষ্টা করেছে প্রশাসন। কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। ডাক দেওয়া হয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও পরিবেশ রক্ষা প্রসঙ্গে একাধিক বার বলেছেন, জলাশয় ভরাট করা যাবে না। প্রয়োজনে তার সংস্কার করতে হবে।
অথচ, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় জলাশয় ভরাটের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের মদতেই যে তা হয়, তা-ও কারও অজানা নয়। ব্যারাকপুর ২ ব্লকের শিউলি পঞ্চায়েতের সুকান্তপল্লিতে একটিই জলাশয় রয়েছে। দীর্ঘদিন সেটির সংস্কার হয়নি। রাস্তা সংলগ্ন জলাশয়টি রাতের অন্ধকারে পোড়া বালি আর ছাই দিয়ে ভরাট করার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় বাসিন্দা নওসর আলি মল্লিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। ব্যারাকপুর ২-এর বিডিও অনামিকা সাহা বলেন, ‘‘পরিবেশ-বিধি ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। বিষয়টি জানিয়ে বিএলআরও এবং টিটাগড় থানার ওসিকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছি।’’ বিডিও-র করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নওসরকে আগামী তিন দিনের মধ্যে ভরাট করা অংশ আবার আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
নওসরের অবশ্য দাবি, তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেই পুকুর ভরাট করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘একশো দিনের কাজে বিভিন্ন জায়গায় বহু পুকুরের সংস্কার হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে গত ২৫ বছরে কখনও হয়নি। সকলে ওখানে আবর্জনা ফেলত, তাই ভরাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ বার আগের অবস্থায় ফেরাব কী ভাবে, বুঝতে পারছি না।’’
ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আখের আলির দাবি, ‘‘জল যে দূষিত হচ্ছে, সে কথা আমাকে জানিয়েছিলেন নওসর। তবে প্রশাসন যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় ঢোকার যে রাস্তা, তার ধারেই রয়েছে জলাশয়টি। ইতিমধ্যেই সেটির বেশ কিছুটা অংশ বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। যেটুকু আছে, সেটুকুও বোজানোর জন্য মরিয়া জমির দালালেরা। পুকুরে জলচর প্রাণীরা আছে। যে বিষাক্ত পোড়া বালি ও ছাই সেখানে ফেলা হচ্ছে, তা ওই প্রাণীদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। তাতে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
রাস্তা সরু বলে ওই এলাকায় কোনও বড় গাড়ি ঢুকতে পারে না। আগুন লাগলে দমকলের গাড়িও ঢুকতে পারবে না। তখন এই পুকুরের জলই কয়েকশো বাসিন্দার ভরসা। পুকুর বোজাতে দেখে এ বার তাঁরাও এককাট্টা হয়ে বাধা দেন। পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা জলাশয়টি সংস্কার করে মশা মারার তেল দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’