প্রতীকী ছবি।
স্কুল থেকে ফিরে ঘরে বসে পড়াশোনা করছিল বছর নয়েকের মেয়েটি। হঠাৎ দিদিমার চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে সে দেখে, শৌচাগার থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ভিতরে দিদিমার আর্তনাদ। খবর পেয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্যে পুলিশ যখন গ্রিলের তালা ভেঙে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করল, তখন তিনি মারা গিয়েছেন। পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে দেহটি।
মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই চোখের সামনে দিদিমাকে পুড়ে মারা যেতে দেখল ওই বালিকা। ঘটনাটি ঘটেছে বেহালা থানা এলাকার রামকৃষ্ণ সরণিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম দীপালি কর (৬০)। প্রাথমিক ভাবে তাদের অনুমান, ওই বৃদ্ধা নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়েছিলেন।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রের খবর, পর্ণশ্রীর বিবেকানন্দ পল্লির একটি দোতলা বাড়ির একতলায় অবিবাহিতা বড় মেয়ে স্বাগতার সঙ্গে থাকতেন দীপালিদেবী। তাঁদের সঙ্গেই থাকত দীপালিদেবীর মেজ মেয়ে সুজাতার ন’বছরের কন্যা স্বর্ণালী। সুজাতা অবশ্য অন্যত্র থাকেন। দীপালিদেবীর আর এক মেয়ে ও ছেলেও অন্য জায়গায় থাকেন।
পড়শিরা জানিয়েছেন, এ দিন স্বর্ণালীকে স্কুল থেকে এনে ঘরে পড়তে বসিয়ে বাইরে থেকে গ্রিলে তালা দিয়ে স্বাগতা কাজে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ দিদিমার চিৎকার শুনে স্বর্ণালী বেরিয়ে দেখে, শৌচাগার থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে এবং প্রাণভয়ে আর্তনাদ করছেন বৃদ্ধা। পড়শিদের দাবি, সেই সময়ে এক যুবক মোটরবাইকে চেপে ওই বাড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে এবং ধোঁয়া দেখে বাইক থামিয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন তিনি। তাঁরাই পুলিশ এবং দীপালিদেবীর বড় মেয়েকে খবর দেন। স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে পুলিশ যখন দীপালিদেবীকে উদ্ধার করে, তখন তাঁর পুরো দেহই পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে।
উদ্ধারের পরে দীপালিদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দীপালিদেবীর বড় মেয়ে স্বাগতা বলেন, ‘‘আমার বাবা যখন-তখন বেরিয়ে যেতেন। তাই আমি বাইরে থেকে গ্রিলে তালা দিয়ে বেরোতাম। বাবা মাস পাঁচেক আগে মারা যাওয়ার পরেও ওই অভ্যেসটা রয়ে গিয়েছিল। মা যে এমন করবে, ভাবতে পারিনি।’’ পড়শি ও আত্মীয়দের দাবি, এর আগেও দীপালিদেবী দু’বার আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এক বার তিনি বিষও খেয়েছিলেন। তাঁর এই প্রবণতা দেখা দেয় বছর পাঁচেক আগে, স্তনে টিউমার ধরা পড়ার পরে। অভিযোগ, সেই সময়ে কোনও চিকিৎসক তাঁর ক্যানসার হয়েছে বলার পরেই অবসাদে চলে যান দীপালিদেবী। পরে অস্ত্রোপচার করে সেই টিউমার বাদ দেওয়া হলেও অবসাদ রয়েই যায়। পাঁচ মাস আগে স্বামী মারা যাওয়ায় সেই অবসাদ আরও বেড়ে যায়। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।