অশোক চক্রবর্তী
একটা ঝোলা আর তার ভিতরে কিছু কাগজপত্র। এই নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন রাস্তার ধারে। শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। টানা দু’মাস সেখানে রয়েছেন ৬৯ বছরের বৃদ্ধ। ঠিক মতো মনে করতে পারছেন না কিছুই। ব্যাগের পাসপোর্ট বলছে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। নাম অশোক চক্রবর্তী।
শেষ পর্যন্ত পরিচয় জানতে হাসপাতাল থেকে যোগাযোগ করা হয় হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সঙ্গে। তাদের চেষ্টায় কলকাতার অস্ট্রেলীয় দূতাবাস অশোকবাবুর দায়িত্ব নিয়েছে। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব অশোকবাবুর সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছে, তা থেকে জানা যাচ্ছে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরির সূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছিলেন তিনি। পরে সপরিবার অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন। এর পরে কবে, কী ভাবে কলকাতায় এলেন, তা জানা যায়নি।
হাসপাতাল জানিয়েছে, গত ২ ডিসেম্বর পুলিশ ওই বৃদ্ধকে প্রায় অচেতন অবস্থায় এনে ভর্তি করে। রাস্তার ধারে পড়ে ছিলেন অশোকবাবু। তাঁর একটি পায়ে আঘাত ছিল। অনাহার ও অপুষ্টির কারণে শরীর ছিল অসম্ভব দুর্বল। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হন। নিজের নামটুকু ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি ওই বৃদ্ধ। পরে তাঁর ব্যাগে পাওয়া যায় একটি পাসপোর্ট।
দিন কয়েক আগে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে জানানো হয় বৃদ্ধের কথা। হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা তাঁর ব্যাগে ব্যাঙ্কের পাসবই পান। সেই সূত্র ধরে শিলিগুড়ির একটি ঠিকানা মেলে। যোগাযোগ করে জানা যায়, অশোকবাবুরা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বছর ছয়েক আগে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া চলে যান তিনি। তাঁর মেয়ে ও স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় থাকতেন। সেই সূত্রেই অশোকবাবু সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
অম্বরীশবাবু জানান, বিরাটিতে অশোকবাবুর একটি ঠিকানা মেলে। সেখানে গিয়েও বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তাঁরা অনেক আগে সেখানে ছিলেন। তাঁর আত্মীয়েরা বর্ধমান বা আসানসোলে থাকতে পারেন। তবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অম্বরীশবাবুই বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রক এবং কলকাতার অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের নজরে আনেন।
অস্ট্রেলীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গিয়েছে, পাসপোর্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, অশোকবাবু তাদের দেশেরই নাগরিক। সেখানকার আধিকারিক রাজীব ঘোষ বলেন, “এটা দুই দেশের কূটনৈতিক বিষয় বলে এ নিয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। তবে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
অশোকবাবু নিজে কথা বলতে পারলেও বিশেষ কিছু মনে করতে পারছেন না। কেন, কী ভাবে এবং কবে কলকাতায় এসেছেন, তা জানতে চাওয়ায় বললেন, “ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে একটা গোলমাল হয়েছিল।” কী গোলমাল? মনে করতে পারলেন না। তবে তাঁর স্ত্রী-মেয়ে রয়েছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কথা তাঁর মনে আছে।
হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর সৌরভ গোস্বামী অস্ট্রেলিয়ার কয়েক জন বাঙালির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদেরই এক জন বিজ্ঞানী গোরাচাঁদ ঘোষ। গোরাচাঁদবাবু বর্তমানে ব্রিসবেনে থাকলেও ১২ বছর সিডনিতে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি এখানকার বাঙালিদেরও জানিয়েছি। তাঁরাও খোঁজ চালাচ্ছেন। অশোকবাবুর মেয়ের নামে এক জনকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। অশোকবাবু তাঁর পদবী ইংরেজিতে যে ভাবে লেখেন, ওই মহিলাও তেমনই লেখেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।”