শিশু-মৃত্যুর তদন্তে হদিস ‘গাফিলতি’র

পুলিশ সূত্রের দাবি, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে শ্বাসকষ্টই শিশুটির মৃত্যুর মূল কারণ। তার ভিত্তিতেই রবিবার ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসককে পূর্ব যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪০
Share:

ঐত্রী দে

মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে আড়াই বছরের শিশু ঐত্রী দে’র অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে প্রাথমিক ভাবে গাফিলতির ইঙ্গিত পেল পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের দাবি, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে শ্বাসকষ্টই শিশুটির মৃত্যুর মূল কারণ। তার ভিত্তিতেই রবিবার ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসককে পূর্ব যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের দাবি, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এবং ওই চিকিৎসকের বয়ান পাশাপাশি রাখলে চিকিৎসায় গাফিলতিই পরিষ্কার হচ্ছে। সেই গাফিলতির পিছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার কী দায় ছিল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। সে জন্য ওই চিকিৎসকের পরে এ বার কর্তব্যরত দুই নার্সকেও তলব করতে চলেছে পুলিশ।

ঐত্রীর মৃত্যু হয় ১৭ জানুয়ারি। তার তিন দিন আগে ১৪ জানুয়ারি জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত শিশুর বাবা-মায়ের অভিযোগ, ঘটনার দিন ভোরে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল ঐত্রীকে। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই শিশুটির খিঁচুনি শুরু হয়। সেই সময় অক্সিজেন দেওয়ার দরকার পড়লেও হাসপাতালের কর্মীরা মাস্ক জোগাড় করতে না পাড়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

Advertisement

শিশুটির চিকিৎসক-সহ হাসপাতালের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন ওই বিভাগে অক্সিজেন মাস্ক তো দুরের কথা, অক্সিজেন সিলিন্ডারও ছিল না। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে শিশু বিভাগে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং মাস্ক থাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা ছিল না বলেই প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এর পিছনে কার গাফিলতি রয়েছে সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার ডেকে পাঠানো হয়েছিল তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্তকে। ওই দিন বিকেলে পূর্ব যাদবপুর থানায় যান তিনি। তদন্তকারীরা জানান, প্রায় দু’ঘণ্টা ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তিনি প্রতি দিন সকালে এবং দুপুরে একটি হজমের ওষুধের ইঞ্জেকশন দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে চিকিৎসক তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ঘটনার দিন ভোরে তাঁকে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এর পরেই তিনি ফোনে ওই ইঞ্জেকশনটি দেওয়ার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীদের কাছে তিনি দাবি করেছেন, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে অবস্থার উন্নতির বদলে নার্সরা শ্বাসকষ্টের কথা বলায় শিশুটিকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, মৃত শিশুর পরিবারের তরফে ঘটনার দিন ভোরে দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা বলা হলেও চিকিৎসক একটির কথা বলেছেন। চিকিৎসককে এড়িয়ে নার্সরা কোনও ইঞ্জেকশন ওই শিশুকে দিয়েছিলেন কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিশুর ময়না তদন্তের রিপোর্টে শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যুর কথা বলা হলেও, হৃদরোগ সংক্রান্ত কোনও অসুস্থতার কথা ঐত্রীর পরিবার তাঁকে জানাননি বলে ওই চিকিৎসক দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি চিকিৎসা করেও শিশুটির কোনও হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা পাননি বলে চিকিৎসকের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement