বিপজ্জনক: বন্ধ কারখানার যন্ত্রপাতির মধ্যে জমেছে জল। নিজস্ব চিত্র
কারখানা বন্ধ দীর্ঘদিন। ফলে তার ভিতরে ঝোপ-জঙ্গল হওয়াটাই স্বাভাবিক। দমদমের জেসপ কারখানার ছবিটা তার থেকে কিছু আলাদা
হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। বন্ধ কারখানার যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন পাত্র, এমনকি পানীয় জলের অব্যবহৃত জেরিক্যানেও অবাধে জল জমছে। আর সর্বত্র মশাদের পরিপাটি সংসার। কারখানার জমি নিয়ে একাধিক মামলা চলছে। ফলে সেখানে প্রবেশাধিকার নেই সাধারণের। এমনকি, চাইলে পুরকর্মীরাও নন। সেই কারণে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থেকে যাচ্ছে এই কারখানা। আর তা থেকে এলাকায় দেদার ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কিত সেখানকার পুলিশ
ক্যাম্পের কর্মীরাও।
এক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ জেসপ কারখানাটির দু’টি ক্যাম্পাস প্রায় ১৫০ বিঘা জমির উপরে দাঁড়িয়ে। পরে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে এই কারখানা। জমির মালিকানা এবং অন্য বিষয় নিয়ে মামলা চলছে। কিন্তু, কারখানা খোলেনি। ফলে তার ভিতরে বর্তমানে আগাছার জঙ্গল। শুক্রবার শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা ওই কারখানার বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন। তখনই দেখা গেল, জল জমে মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে জেসপ।
এক সময়ে কারখানার ভিতর থেকে অবাধে যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছিল বলে সেখানে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। যশোর রোড লাগোয়া কারখানার গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল, পুলিশকর্মীদের জন্য আনা পুরসভার দু’টি জলের ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে। বিভিন্ন প্রয়োজনে সেই জল নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি জল জমা হচ্ছে মেঝেতেই। গেটের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে জলের ভাঙা ফিল্টার, মুখ-খোলা জেরিক্যান, থার্মোকলের পাত্র। সবগুলিতেই জল জমা হচ্ছে। জলের জেরিক্যানে চোখে পড়ল প্রচুর
মশার লার্ভাও।
এই যদি গেট সংলগ্ন এলাকার হাল হয়, তা হলে ভিতরের অবস্থা আরও মারাত্মক। কারখানার বিভিন্ন অংশে উঁচু ছাউনি থাকলেও তাতে ছোট-বড় অসংখ্য ফুটো। সেগুলি দিয়ে জল পড়ে জমেছে অব্যবহৃত যন্ত্রাংশে। সেখানেও অবাধে ডিম পেড়েছে মশারা। কারখানার ভাঙা স্তম্ভ, খুঁটির মধ্যেও জল জমেছে। সেখানেও কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
ডেঙ্গি নিয়ে এই কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ভরদুপুরে কারখানার মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়। ভনভন করছে মশা। পুলিশকর্মীরাই বলছেন, বর্তমানে এটি এখন ডেঙ্গির কারখানায় পরিণত হয়েছে! মশার চোটে ডিউটি করা মাথায় উঠেছে। মশার কামড় ঠেকাতে গায়ে সব সময়ে মলম লাগিয়ে রাখতে হয়। রাতে মশা মারার কয়েল ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। আশপাশের বাসিন্দারাও চরম ক্ষুব্ধ। দমদম জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গির আতঙ্ক। পাশের দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ডেঙ্গিতে প্রাণ পর্যন্ত গিয়েছে কয়েক জনের। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কারখানা থেকে প্রচুর মশা আমদানি হচ্ছে এলাকায়।
দমদমের পুরপ্রধান হরিন্দর সিংহ বলছেন, “ওটা সত্যিই মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আইনি সমস্যা থাকায় সব সময়ে পুরকর্মীরা ওখানে ঢুকতে পারেন না। কিন্তু আর পদক্ষেপ না করলে চলবে না। আমি পুর দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি বিষয়টি নিয়ে। কারণ, এত বড় এলাকা পরিষ্কার করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। দফতরের নির্দেশ মতো কারখানা পরিষ্কার করার জন্য চার দিন আগে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সব জটিলতা দ্রুত মিটিয়ে ওই কারখানা সাফ করা হবে।”