—ফাইল চিত্র।
লকডাউনের কারণে জমে রয়েছে পকসো আইনে রুজু হওয়া দু’হাজারেরও বেশি মামলা। এক দিকে যেমন শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার আটকে রয়েছে, তেমনই আবার মিথ্যে মামলায় ফেঁসে জেলে পচছেন নিরপরাধ অনেকেই। এমনই একটা সময়ে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে আইনজীবীদের একাংশ আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ওই আদালতে। বয়কটকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তাই সরব হয়েছেন ওই আদালতেরই আইনজীবীদের একটি বড় অংশ। আদালত সূত্রের খবর, আইনজীবীদের একাংশ বার অ্যাসোসিয়েশনে বৈঠক করে বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ পকসো আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। আবার বয়কটের বিরোধী আইনজীবীরা মনে করছেন বিচার-ব্যবস্থা চালু রাখতে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।
আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। তাঁদের একাংশের দাবি, কয়েক জন আইনজীবী বার কাউন্সিল বয়কটের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ বৈঠক না ডেকেই কাউন্সিলের সদস্য আধিকারিকেরা আদালত বয়কট করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ২২০০ মামলা জমে রয়েছে। এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘পকসোর মতো একটি শক্তিশালী আইনকে কাজে লাগিয়ে বহু মিথ্যা অভিযোগ দায়ের হয়। নির্দোষকেও জেল হেফাজতে থাকতে হয়। মামলার বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে তাঁদেরও অহেতুক হয়রানি পোহাতে হবে। আবার শিশুদের যৌন নির্যাতনে আসল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তাই বিচারক দুর্ব্যবহার করছে বলে আদালত বয়কট করার সিদ্ধান্ত আসলে বিচারব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়া।’’
আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “বার অ্যাসোসিয়েশনে বহু বরিষ্ঠ আইনজীবী রয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে এমন সিদ্ধান্তে সায় দিলেন তা বোঝা যাচ্ছে না। অবিলম্বে এই বিষয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।” মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “লকডাউনে বিচার প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ ছিল। আদালত চালু হওয়ার পরে বয়কট ঘোষণা করে বিচার প্রক্রিয়া স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
আদালত বয়কটকারী আইনজীবীদের অভিযোগ, বিচারক দুর্ব্যবহার করছেন। বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক দূরত্ব-বিধি মানতে গিয়ে মামলার সঙ্গে জড়িত এক জনের বেশি আইনজীবীকে এজলাসে থাকার অনুমতি দিচ্ছেন না। একের বেশি আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না। মামলার নথিপত্র আইনজীবীদের দেখার বিষয়েও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এর পরেই আইনজীবীদের একাংশ দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। ওই আইনজীবীদের অভিযোগ, শুধু ওই এজলাসের বিচারকই এমন আচরণ করছেন।
আদালতের আইনজীবীদের একটি বড় অংশের মতামত, জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় বিচারকের দুর্ব্যবহারকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে আদালতে অচলাবস্থা তৈরি করছেন আইনজীবীদের একাংশ। বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সূত্রের খবর, আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে বার অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক বর্ষীয়ান আইনজীবী। বৈশ্বানরবাবু পরে বলেন, “কয়েক জন আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা একটি কমিটি করেছি। অচলাবস্থা যাতে বেশি দিন না থাকে সেই বিষয়ে আলোচনা করছি।” কিন্তু এত বড় একটি সিদ্ধান্ত সাধারণ সভা না ডেকে নেওয়া হল কেন, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আলিপুর দায়রা ও ফৌজদারি আদালতের অধিকাংশ আইনজীবীর দাবি, অবিলম্বে এই বিষয়ে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করুক। তাঁরা জানান, কয়েক সপ্তাহ আগেই এক শ্রেণির আইনজীবী নানা অভিযোগ তুলে জেলা বিচারকের এজলাস কার্যত বয়কট করে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছিলেন। সে ক্ষেত্রেও জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে এমন আচরণ করেছিলেন ওই আইনজীবীরা।