Scrub Typhus

শীতের শুরুতেও বিদায় নেয়নি ডেঙ্গি, দোসর স্ক্রাব টাইফাস-ও

আবহাওয়ার এ হেন পরিবর্তনেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে বিভিন্ন পতঙ্গ ও ভাইরাস। ফলে শীতের শুরুতেও ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং স্ক্রাব টাইফাসের মতো অসুখে আক্রান্ত হওয়া অব্যাহত রয়েছে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এখনও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি, তবে ভোরে বা রাতে হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দিনে আবার গরম লাগছে। আবহাওয়ার এ হেন পরিবর্তনেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে বিভিন্ন পতঙ্গ ও ভাইরাস। ফলে শীতের শুরুতেও ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং স্ক্রাব টাইফাসের মতো অসুখে আক্রান্ত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘শীত পড়লেই অমুক রোগ কমে যাবে বা চলে যাবে, এমন কথা বলার দিন শেষের দিকে। পরিবেশের কারণেই এই সমস্ত রোগ এখন সারা বছরের!’’

Advertisement

এ বছর এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি ভাবে জানায়নি স্বাস্থ্য দফতর। যদিও ডিসেম্বরের গোড়াতেই তা এক লক্ষ পেরিয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অক্টোবরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরুতেই ডেঙ্গি চলে যাবে বলে মনে করা হলেও, তা হয়নি। বরং এখনও রোগী পাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ম্যালেরিয়াও হচ্ছে। আবার, বর্ষায় পরজীবী পোকার কামড়ে হওয়া স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপও দেখা যাচ্ছে।

সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকের মাইক্রোবায়োলজিস্ট পম্পি মজুমদার জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া আগের থেকে কমেছে। তবে স্ক্রাব টাইফাস হচ্ছে। শিশু ও বয়স্ক, সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে সে ভাবে স্ক্রাব টাইফাস পাওয়া না গেলেও শেষ দু’-তিন মাসে দেখা যাচ্ছে।’’ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তেও আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। এ বছরে এখনও পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১৩৭। সোমবার বিকেল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে দু’জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান উপাধ্যক্ষ কল্যাণ খান। জলপাইগুড়ি সদর ব্লক, রাজগঞ্জ ময়নাগুড়ি ব্লক, ময়নাগুড়ি পুরসভা ও জলপাইগুড়ি পুরসভা এলাকায় এ বছরে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও মালদহ জেলাতেও আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। তবে, মৃত্যুর খবর নেই।

Advertisement

সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, বর্ষায় পোকা কামড়ানোর ঘটনা বাড়ায় আগে শুধু সেই সময়েই স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ দেখা যেত। এখন তা ডিসেম্বরেও থাকার অর্থ, পতঙ্গবাহিত রোগ সারা বছরই থাকছে বা আগামী দিনে থাকার আশঙ্কা বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের উষ্ণায়ন ও দূষণ বৃদ্ধির কারণেই বর্ষার অসুখ শীতেও হচ্ছে। যাবতীয় পতঙ্গবাহিত রোগের শীতেও থাকার বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।’’

এ দিকে, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তবে পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, গত বছরের তুলনায় রোগীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কম। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি পুরো কমেনি। তাই সেই সংক্রান্ত সব রকমের পদক্ষেপ চলছে।’’ মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে মশা। বেশি বংশবিস্তার করতে না পারলেও কিছু জায়গায় থাকছে এবং জীবাণু বহন করছে। তা থেকে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন।’’

উষ্ণায়ন, দূষণের পাশাপাশি তাপমাত্রার অতি দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে পতঙ্গ ও ভাইরাসও নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ফলে একটু ঠান্ডা পড়লেও তারা সংক্রমণ ছড়াতে পারছে বলে মত জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে রোগ চলে যাবে, এই ধারণা এখন আর ঠিক নয়। বরং কমবেশি সারা বছর ধরেই তা হবে। তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আর বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে পরিবেশ রক্ষায় জোর দিতেই হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement