‘প্রনপ্রতিমা’র দক্ষিণ-অভিযান

যুগ-পরিবর্তনের পটভূমিতেই নবজন্ম অ্যালেনের চিংড়ির কাটলেটের। সাবেক চিৎপুর রোডে এখন অদৃশ্য অ্যালেন মার্কেটের নামটাও কাটলেটই অমর করে রেখেছে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৭
Share:

অ্যালেনের চিংড়ির কাটলেট।

শতক-পার করা ইতালিয় মার্বেলের টেবিল পড়ে পুরনো ঠিকানায়। সেই স্বাদ-সুরভির দ্বিতীয় ভাগ দক্ষিণে পাড়ি দিয়েছে।

Advertisement

উত্তর কলকাতা জুড়েই অজস্র ডাকসাইটে কাফে-কেবিনের ‘শব’দেহ। কোথাও পুরনো কেবিনের জায়গায় নামী বিরিয়ানি চেনের দোতলা রেস্তরাঁ, কোথাও সাবেক কেবিনের ‘বিক্ষুব্ধ’ রাঁধুনেরা ফুটপাতে ঘাঁটি গেড়েছেন। গুটিকয়েক রংচটা ঝুল-পড়া বিগতযৌবন অবয়ব। মাংসের ক্রিম কাটলেট, পুডিং, প্যানথেরাসেরা টিমটিম করে জ্বলছে, কিংবা অদৃশ্য।

যুগ-পরিবর্তনের পটভূমিতেই নবজন্ম অ্যালেনের চিংড়ির কাটলেটের। সাবেক চিৎপুর রোডে এখন অদৃশ্য অ্যালেন মার্কেটের নামটাও কাটলেটই অমর করে রেখেছে। যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের পরে হাজরার প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে অ্যালেন কিচেনের নয়া সংস্করণ। ঘি-সুরভিত মুচমুচে চিংড়ির দ্বিতীয় আঁতুড়ঘর। বিস্কুটগুঁড়োর পরতে বিয়েবাড়ির ল্যাজা বেরোনো চিংড়ি কাটলেটের ভিন্ন ঘরানা। অ্যালেনের ‘প্রাণপ্রতিমা’র (কিংবা ‘প্রনপ্রতিমা’য়) নির্ভার, খাঁটি ঘিয়ে ভাজা হাল্কা সোনালি রঙা ব্যাটার। একদা তাজ বেঙ্গলের চেম্বার্সের নামী শেফ অবধি এই চিংড়ি-মহিমায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু আধখানা প্রশ্ন করলেই মুখে কুলুপ অ্যালেনের তৎকালীন কর্তাদের। আজকের কাপ্তেন সুব্রত সাহা শুধু বলেন, ‘‘এই কাটলেট কড়ায় ছাড়ার কসরতটাই আসল।’’ সাহা-বাড়ির ছেলেরা কয়েক প্রজন্ম ধরে আশ্চর্য শেফ। দক্ষিণের ঠিকানায় কাটলেটের সঙ্গে বিখ্যাত শিলে-বাটা কাসুন্দিতে মৃদু গন্ধরাজের প্রলেপ।

Advertisement

পুরনো কেবিনগুলির মধ্যে ‘ডেভিল-তীর্থ’ নিরঞ্জন আগার অন্য শাখা খোলায় বিশ্বাসী নয়। তবে ‘মিত্র কাফে’ বিরিয়ানি, মোমো চেনের আদলে ভিআইপি রোড, বিরাটি, দমদম, গোলপার্কে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সাবেক ফ্রাই-কবিরাজি কিন্তু শোভাবাজারের আদি কেবিনেই নির্ভরশীল। অন্যত্র চিতল মুইঠ্যা, বিরিয়ানি, চাইনিজও চলছে।

অ্যালেনের দক্ষিণ অভিযানে ভরসা চিরকেলে আইটেমের আভিজাত্যই। চার পুরুষ আগে প্রতিষ্ঠাতা জীবনকৃষ্ণ সাহা স্পেনসেস হোটেল ছেড়ে আসেন। এই স্পেশাল প্রন বা ভেটকি কাটলেট, ঘি-সুরভিত চিকেন-মাটন স্টেক, কবিরাজি কিংবা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান শৈলীর মাছ-মাংসের পুরঠাসা চপে তাঁরই হাতযশ। গোড়ায় চিৎপুর রোডের পরে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের অ্যালেন এখনও নিজস্ব ছন্দে। জীবনবাবুর দুই পুতি সুব্রত ও জয়ন্ত সাহা মিলে হাজরায় অ্যালেনকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

দক্ষিণের অ্যালেনে বাড়তি প্রাপ্তি ফ্রেশ ক্রিম মথিত বেল পেপার-বিশিষ্ট চিকেন স্টু, পুরুষ্টু গার্লিক ব্রেড। তবে বসে খাওয়ার জায়গা কম। তাই খাবার সরবরাহের অ্যাপগুলির দ্বারস্থ হওয়াই যায়। উত্তরের অ্যালেন এখনও অ্যাপ-অস্ত্র ব্যবহার করতে নারাজ। দক্ষিণে সেই জড়তা নেই।

বহুজাতিক বার্গার বা মুরগি ভাজার দুনিয়াজোড়া সাম্রাজ্যের পাশে কলকাতার নিজস্ব চপ-কাটলেট শৈলীর হেরে যাওয়ার ছবিটাই ক্রমশ ভবিতব্য হয়ে উঠছে। অ্যালেন কি অন্য ইতিহাস লিখতে পারবে? দক্ষিণ কলকাতার কাটলেট-কাতররাও উৎসুক!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement