ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সরকারি খতিয়ান ঠিক নয়, অভিযোগ

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনের তালিকায় থাকা ২৭ জনের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দা পাঁচ বছরের একটি শিশুও রয়েছে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডেঙ্গির মরসুম এখন শেষের দিকে। গোটা রাজ্যে এ বছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন ২৭ জন। কিন্তু কলকাতা পুরসভা এলাকায় ওই রোগে মাত্র এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের!

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনের তালিকায় থাকা ২৭ জনের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দা পাঁচ বছরের একটি শিশুও রয়েছে। তার মৃত্যুর কারণও ডেঙ্গি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে নিভা মণ্ডল (৫) নামে ওই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল। তবে পুজোর পর থেকে মশাবাহিত রোগে পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকটি শিশুর। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রুহুল মল্লিকের (১০) মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি বলেই দাবি করেছিলেন তার পরিজনেরা। একই ভাবে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা বৃষ্টি দাস (৯) নামে একটি শিশুর মৃত্যুর খবরও মিলেছিল। সেপ্টেম্বরেই রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা, সাত বছরের প্রজ্ঞা সাহার মৃত্যুর পরে ওই এলাকায় মশা দমনে অভিযান

চালিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। রিজেন্ট পার্কের ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ-সহ কলকাতা পুরসভার পদস্থ আধিকারিকেরাও।

Advertisement

তবে ট্যাংরার বাসিন্দা লি সেওং কুয়োং (২৪), বাগবাজারের পূজা দাস (১৬), রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের শরণ্যা মুখোপাধ্যায় (২৫) ও পুরকর্মী সান্ত্বনা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫০) মশাবাহিত রোগে মারা গিয়েছেন বলে জানা গেলেও মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়নি।

স্বাভাবিক ভাবেই ডেঙ্গিতে মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান শুনে বিস্মিত বিভিন্ন জেলায় কর্মরত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের একাংশের দাবি, শুধু কলকাতা পুরসভা এলাকা নয়, সার্বিক ভাবেই ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সময়ে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে মৃত্যুর যা খবর এসেছে, তার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান মিলছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হিসেব বলছে, ডেঙ্গি নিয়ে আর জি করে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন মারা গিয়েছেন। এসএসকেএমে সংখ্যাটা দুই, বেলেঘাটা আইডি-তে পাঁচ, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে তিন এবং সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্তত দু’জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর তাঁদের কাছে রয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি সেখানে ডেঙ্গি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠকেও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়।

উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গিতে ক’জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে? সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে সংখ্যাটা হল ১৮।

পুর এলাকায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মৃত্যুর সংখ্যা স্বাস্থ্য ভবনই বলবে। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ঘটনায় রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে।’’ এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের নথি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব ক’টি মৃত্যুর ঘটনায় এখনও নথি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ পর্যন্ত এক জনের মৃত্যু ডেঙ্গিতেই হয়েছে বলে নিশ্চিত করা গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement