অবাধ: দু’টি মৃত্যুতেও ফেরেনি হুঁশ। সাইকেল নিয়ে বাইপাস পেরোনো চলছেই। পুলিশ দর্শকই। রবিবার, চিংড়িঘাটায়। ছবি: শৌভিক দে
সাইকেলে চেপে ঝুঁকির পারাপার ছাড়া বিশেষ গতি নেই সল্টলেকের শান্তিনগর, সুকান্তনগর, নাউভাঙা, নবপল্লির বাসিন্দাদের। পানীয় জল, স্কুল, রুটিরুজি— রোজনামচার সামান্য জিনিসটুকুর জন্যও যেতে হয় বড় রাস্তার পেরিয়ে বেলেঘাটায়! সাইকেল চালিয়ে বাইপাস ধরে যাওয়ার সময়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দুই তরুণের প্রাণ যাওয়ার পরে এমনই কথা উঠে এল স্থানীয়দের মুখে মুখে।
বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, শনিবারের দুর্ঘটনাস্থল চিংড়িঘাটার ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক পথচারী, সাইকেল আরোহী যাতায়াত করেন। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘দিনের ব্যস্ত সময়ে সাইকেলের যাতায়াত দেখলে অবাক হতে হয়!’’ এই যাতায়াতের কারণ ব্যাখ্যায় বিধাননগর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত শান্তিনগরের বাসিন্দা পূজা মণ্ডল বলেন, ‘‘সামান্য পানীয় জলের জন্যও তো বেলেঘাটা যেতে হয়। শান্তিনগর, সুকান্তনগর, নাউভাঙা, নবপল্লি, বাসন্তীদেবী কলোনি, ত্রিনাথ কলোনি, বানতলা, ছয়নাভির মানুষ বেলেঘাটা থেকে জল নেন। সেখান থেকে পানীয় জল এনে অনেকে নিজের এলাকায় বিক্রি করেন। ১০ টাকা প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়। কখনও তা ১৪ টাকাও হয়ে যায়।’’ আর এক বাসিন্দা মিনতি মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের সব কিছুই তো বেলেঘাটা। ওপারে না গেলে তো অনেকের সংসারই চলবে না।’’
মাছের ভেড়ির কর্মী, ভ্যানচালক, ফুলবাগান-শিয়ালদহ রুটের অটোচালক— রুজির সন্ধানে সকলেরই ওপারে যাওয়ার তাড়া থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা কাজল মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে যাওয়ার জন্য ছেলে, মেয়েদের সাইকেল দিয়েছে রাজ্য সরকার। আমাদের সন্তানদের বেশির ভাগের স্কুল তো বেলেঘাটায়। দেশবন্ধু গার্লস-বয়েজ, শ্যামাপ্রসাদ, শুঁড়াকন্যা, মিত্র সঙ্ঘ, বুনিয়াদি, শান্তি সঙ্ঘ, সব ভাল স্কুলই তো ও দিকে।’’
প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি দিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত মসৃণ করতে চিংড়িঘাটা ক্রসিংয়ে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকে বলে দাবি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকদের। কিন্তু মানুষের মধ্যে নিয়ম না মানার প্রবণতা অনেক বেশি বলে মত তাঁদের। উল্টোদিকে স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, যে পথচারীরা বেলেঘাটার দিকে যাবেন, তাঁদের উড়ালপুলের নীচে অপেক্ষা করতে হয়। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য সিগন্যাল খোলা থাকে। এ সময়ের মধ্যে সল্টলেক থেকে বেলেঘাটা এবং উল্টোডাঙাগামী গাড়ির সঙ্গে তাঁদেরও পারাপার করতে হয়। পিন্টু সর্দার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে ভাবে সক্রিয় হয়েছে, তা পথনিরাপত্তা সপ্তাহের সময়ে শুধু দেখা যায়। অন্য সময়ে পুলিশ টাকা তুলতেই ব্যস্ত থাকে।’’ অভিযোগ খারিজ করে লালবাজারের এক কর্তা জানান, চিংড়িঘাটা মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তার ফুটেজ কন্ট্রোল রুম থেকে দেখা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।