প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকের হাতের লেখা নিয়ে বিভ্রান্তি হয় মাঝেমধ্যেই। ফাইল চিত্র।
খসখস করে ওষুধ লিখে দিলেন চিকিৎসক। সেই কাগজ নিয়ে ওষুধের দোকানের দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে কাউন্টারে পৌঁছে রোগীকে শুনতে হল, ‘‘কী লেখা আছে, বোঝা যাচ্ছে না।’’ অগত্যা রোগী আবার ছুটলেন হাসপাতালে। কিন্তু, তত ক্ষণে বহির্বিভাগ থেকে ওই চিকিৎসক চলে গিয়েছেন। প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকের হাতের লেখা নিয়ে এমন বিভ্রান্তি মাঝেমধ্যেই ঘটে। এই সমস্যার সমাধানে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে ধীরে ধীরে হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। পরিবর্তে চালু হবে ই-প্রেসক্রিপশন। অর্থাৎ, চিকিৎসক ওষুধ লিখবেন কম্পিউটারে টাইপ করে। সেটির প্রিন্ট-আউট পাবেন রোগী। বুধবার রাজ্যের ব্লক থেকে মেডিক্যাল কলেজ স্তরের সমস্ত হাসপাতালের সুপারদের এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “ধাপে ধাপে সকলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিষয়টিতে সড়গড় করা হচ্ছে। সব হাসপাতালে পরিকাঠামোও তৈরি হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এর ফলে এক দিকে যেমন প্রেসক্রিপশন আর দুষ্পাঠ্য থাকবে না, তেমনই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো প্রত্যেক রোগীর তথ্যও মজুত থাকবে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। যাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কোনও রোগীর যাবতীয় তথ্য প্রয়োজনে বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকও পেতে পারেন। একই ভাবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের পর্যালোচনা বৈঠকে বলা হয়েছে, রাজ্যের যক্ষ্মা রোগীদের তথ্য আরও বেশি করে কেন্দ্রীয় সরকারি পোর্টালে তুলতে হবে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, যক্ষ্মা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যার থেকে নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা কম। তাতে জাতীয় যক্ষ্মা দূরীকরণ কর্মসূচিতে সমস্যা হচ্ছে বলেই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ৯১৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০১টিতে ই-প্রেসক্রিপশন চালু হবে। মহকুমা থেকে জেলা, স্টেট জেনারেল ও সুপারস্পেশ্যালিটি স্তরের হাসপাতালগুলির অন্তত ৫০ শতাংশ ওয়ার্ডে এই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের অন্তত দু’টি বিভাগে ই-প্রেসক্রিপশন চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কয়েকটি বিভাগ ও জেলার কিছু হাসপাতালে ই-প্রেসক্রিপশন চলছে। রাজ্যের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সংগঠনের সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখন সর্বত্রই সমস্ত কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে। ই-প্রেসক্রিপশন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”
পর্যালোচনা বৈঠকে বলা হয়েছে, যক্ষ্মায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলেই রোগীকে পরীক্ষা করাতে হবে। অনেকেই বেসরকারি জায়গায় যক্ষ্মার চিকিৎসা করান। সেই তথ্য সরকারের কাছে থাকে না। তাই জেলার ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট সেলকে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সেই তথ্য জোগাড় করতে হবে।
যক্ষ্মায় মৃত্যুর ঘটনার পর্যালোচনাও নিয়মিত ভাবে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’ গড়া হবে। হাসপাতালে হাওয়া-বাতাস খেলে, এমন জায়গায় যক্ষ্মা রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতালের সুপারদের বিভিন্ন পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।