—ফাইল চিত্র।
কিশোরটির মানসিক বিকাশ কম। কথা বলতে গেলেও জড়িয়ে যায়। অথচ ১৪ বছরের ওই কিশোরের আদালতে দেওয়া গোপন জবানবন্দির উপরে নির্ভর করছে মামলার গুরুত্ব। এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তার জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে যাতে ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ উপস্থিত থাকেন, তার নির্দেশ দিল আলিপুর পকসো আদালত।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা অনেক সময়েই নিজেদের কথা ঠিক ভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারে না। হাবভাব এবং আচরণের মাধ্যমে তাদের কথা বুঝে নিতেই প্রয়োজন হয় এই ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ বা বিশেষ শিক্ষকের। আলিপুর পকসো আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাধবী ঘোষ জানিয়েছেন, একবালপুর থানার একটি মামলায়
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ওই কিশোরের জবানবন্দির সময়ে ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ রাখার আবেদন করেছিল কলকাতা পুলিশ। সব দিক বিবেচনা করে কলকাতা জেলার চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসারকে (ডিসিপিও) ওই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালত সূত্রের খবর, জুভেনাইল জাস্টিস আইন (২০১৫) অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় প্যানেল তৈরি করে ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ নিয়োগ করার কথা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও সেই ব্যবস্থা না থাকায় এই মামলার ক্ষেত্রে আদালত এই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘এর আগে মূক-বধির কিশোর-কিশোরীর জবানবন্দির সময়ে অনুবাদক বা ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’ বোঝেন যাঁরা, তাঁদের কোর্টে আনা হয়েছে। কিন্তু ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ রাখার নির্দেশ এই প্রথম।’’
আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, গত ২ জানুয়ারি একবালপুর থানার ওই মামলাটি পকসো আদালতে ওঠে। অভিযোগ ছিল, দাদার সঙ্গে দোকানে যাওয়ার সময়ে ওই কিশোরের যৌন নিগ্রহ করে তারই এক পরিচিত ব্যক্তি। ওই কিশোরের পরিবার জানিয়েছে, ঘটনার দিন কোনও ভাবে দাদার চোখ এড়িয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি কিশোরটিকে অন্যত্র নিয়ে যায় এবং নিগ্রহ করে। ভাইকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কিশোরটির দাদা বাড়ি ফিরে আসে। পরে কিশোরটি নিজেই কোনও ভাবে বাড়ি ফিরে আসে এবং বাড়ির লোককে ঘটনার কথা জানায়। এর পরেই পুলিশে যায় তার পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরের কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে কথা জড়িয়ে গেলেও আস্তে আস্তে শুনলে তার কথা বুঝতে পারেন পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে যদি সে ঘাবড়ে যায় এবং তার কথা বুঝতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কারণেই ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছেন, ওই কিশোরের মানসিক বিকাশে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, সে সংক্রান্ত পরীক্ষা করার পরেই আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে।