ছবি: সংগৃহীত।
জামিনের আর্জি খারিজ হওয়ায় এজলাসে আইনজীবীদের বিক্ষোভের জেরে শুনানি বন্ধ রেখে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিলেন জেলা বিচারক। তিনি এজলাস ছাড়ার পরেই আইনজীবীদের হট্টগোলের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কর্তব্যরত পেশকার। গৌতম দাস নামে ওই পেশকারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর আদালতের জেলা বিচারকের এজলাসে।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে পরপর বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি চলে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার একটি রাজনৈতিক খুনের মামলায় অভিযুক্ত কয়েক জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে জেলার বিচারক উদয় কুমার জামিনের নির্দেশ খারিজ করে দেন। এর পরেই উত্তেজিত আইনজীবীরা এজলাসে বিক্ষোভ শুরু করে দেন বলে অভিযোগ। বেশ কিছু ক্ষণ ধরে সেই বিক্ষোভ চলে। এর পরেই জেলা বিচারক এজলাস ছেড়ে নিজের ঘরে চলে যান। তিনি এজলাস ছাড়ার পরেই বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা পেশকার গৌতমবাবুর উপরে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন বলে অভিযোগ। যার জেরে ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গৌতমবাবু। সহকর্মীরা তাঁকে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যান। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে গৌতমবাবুর হৃদ্যন্ত্রে গোলযোগ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মাস সাতেক আগে গৌতমবাবু কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা।
এ দিন জেলা বিচারকের এজলাসে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে হাজির ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ দিন সকালে জেলা বিচারকের এজলাসে শুনানিতে ছিলাম। কিন্তু ওই ঘটনার সময়ে সেখানে ছিলাম না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ আলিপুর আদালতের আইনজীবী তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য ইন্দ্রনীল বসু বলেন, ‘‘আমি আজ আদালতে ছিলাম না। তবে এই রকম একটি ঘটনা যে ঘটেছে, তা শুনেছি। ঠিক কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।’’ আলিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে গেলেই এক শ্রেণির আইনজীবী দিনের পর দিন বিচারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে শুনানির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। এটা একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
উল্লেখ্য, আলিপুর আদালতে এমন ঘটনা নতুন নয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানা নিয়ে পকসো আদালতের বিচারকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। যার জেরে দীর্ঘ পাঁচ মাস ওই বিশেষ আদালত বয়কট করেন বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা। সেই বয়কটের ফলে কাজকর্ম কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সেখানে। সম্প্রতি ওই আদালতের বিচারক বদলি হয়েছেন।