আলিপুর আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে তিন অভিযুক্ত—নিজস্ব চিত্র।
খিদিরপুরের মহিলা বক্সারের শ্লীলতাহানি এবং কটুক্তির ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে ১ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। মঙ্গলবার ওই মামলার সাজা ঘোষণা করেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভদীপ চৌধুরী। আইনজীবী মহলের দাবি, এই প্রথম কলকাতায় কোনও মহিলার সম্ভ্রমহানির ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় অভিযুক্তেরা জামিন পায়নি। তাদের জেল হেফাজতে রেখেই গোটা বিচারপর্ব চলেছে।
গত ২৮ জুন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নিজের স্কুটারে অফিসে যাচ্ছিলেন আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পাওয়া ওই মহিলা বক্সার। রাস্তায় তিন যুবক তাঁর উদ্দেশে কটূক্তি ছুড়ে দেয়। ওই বক্সার জানিয়েছিলেন, তাঁর স্কুটারের সামনে দিয়ে ওই তিন যুবক বাস ধরতে যাচ্ছিল। তিনি তাদের জায়গা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা-ও ওই যুবকরা তাঁকে গালিগালাজ করে। এর পরেই তিনি প্রতিবাদ করার জন্য ওই বাসটিকে ধাওয়া করে পরের স্টপেজ পর্যন্ত যান। সেখানে পৌঁছে ওই যুবকদের প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে গালিগালাজ করা হয়েছে?
অভিযোগে ওই বক্সার আরও জানান, তাঁর প্রশ্ন শুনেই ওই তিন যুবক বাস থেকে নেমে এসে তাঁকে ফের গালিগালাজ দেওয়া শুরু করে। হুমকি দেয়। এমনকি, তাঁর গলাও চেপে ধরে তারা। এর পর মারধর করতে শুরু করলে তিনি সাহায্য চেয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন। তখন স্থানীয়রা মধ্যস্থতা করে তাঁকে উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন: গলা থেকে পেট পর্যন্ত সেলাই করা, বাগবাজারে গঙ্গার পাড়ে উদ্ধার দেহ ঘিরে রহস্য
এই ঘটনার কথা ই মহিলা বক্সার সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। দক্ষিণ বন্দর থানায় এফআইআর রুজু করা হয়। ঘটনার দিনই গ্রেফতার করা হয় তিন অভিযুক্ত শেখ ফিরোজ, ওয়াসিম খান এবং রাহুল শর্মাকে। ঘটনার ১১ দিনের মধ্যে ৮ জুলাই দক্ষিণ বন্দর থানার তদন্তকারীরা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (সম্ভ্রমহানি), ৫০৬ (ভয় দেখানো), ৫০৯ (কটূক্তি) এবং ১১৪ (সম্মিলিত ভাবে অপরাধ করা) ধারায় চার্জশিট জমা দেয়।
আরও পড়ুন: পথকুকুরের শুশ্রূষায় রাত জাগল আবাসন
আদালত ১০ জুলাই চার্জ গঠনের দিন ধার্য করে। চার্জ গঠনের সময় আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩ (মারধর) ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার দু’পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ-পর্ব শেষে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। তিনি তিন জনকেই দোষী সব্যস্ত করেছেন। এই মামলায় সরকার পক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন সৌরীণ ঘোষাল। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রেখেই তিন অভিযুক্তের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। আট মাসেরও কম সময়ে বিচার শেষ হয়েছে এবং তিন জনকেই আদালত দোষী স্যবস্ত করেছে। ধৃতেরা একাধিক বার জামিনের আবেদন করলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। আদালত ধৃতদের জামিন দেয়নি। এ রকম নজির কলকাতায় নেই।”