স্বামীর সঙ্গে মনুয়া। ছবি অনুপমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে
স্ত্রী মনুয়ার সঙ্গে ব্যাঙ্কে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন অনুপম সিংহ। সেই অ্যাকাউন্টের টাকা দিয়েই ‘সুপারি কিলার’ লাগিয়ে অনুপমকে খুন করতে চেয়েছিল মনুয়া। কিন্তু প্রেমিক অজিত রায়ের সঙ্গে আলোচনার পরে সেই টাকাটাও নষ্ট করতে চায়নি সে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরেই সুপারি কিলারের পরিকল্পনা ছেড়ে অনুপমকে খুনের ছক করে দু’জন।’’
অনুতাপ তো দূর, জেরায় অনুপমের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে মনুয়া। পুলিশের দাবি, জেরায় মনুয়া বলেছে, সে পড়াশোনা, নাচ আর চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু অনুপমের সঙ্গে আলাপের পরেই তাঁকে বিয়ে করতে চাপ দিচ্ছিলেন বাবা-মা। তাঁরা বাংলাদেশে অনুপমের বাড়ি গিয়ে বিয়ে পাকাও করে আসেন। মনুয়া রাজি না হওয়ায় তাঁর স্থানীয় এক কাউন্সিলরের কাছে মনুয়াকে নিয়ে যান। সবার চাপেই সে বিয়েতে রাজি হয়। মনুয়া আরও জানিয়েছে, অনুপম সব সময়ে নিজের কেরিয়ার ও টাকাপয়সার পিছনে ছুটতেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মনুয়া কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে রাগারাগি করতেন। মনুয়ার অভিযোগ, কিছু হলেই সব সময়ে তাঁর বাবা-মাকে ফোন করে মনুয়ার নামে অভিযোগ জানাতেন অনুপম। মনুয়ার দাবি, সে পুরসভায় চাকরি পাওয়ার পরে কাজ ছাড়ার জন্য জোর করতেন অনুপম। সন্তান নিতেও চাপ দিতেন। মনুয়া তার জন্য আরও সময় চেয়েছিল। এ সবের জেরে মনুয়া এক দিন রেগে বাড়ি ছেড়ে চলেও যায়। মা-বাবা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: মনুয়া এমন? বিশ্বাস হচ্ছে না মামার
তবে মনুয়া-অনুপমের পুরনো যে সব ভিডিও পুলিশ পেয়েছে, সেখানে অনুপমের নামে ‘পারফেক্ট হাজব্যান্ড’ এবং আরও প্রশস্তিই শোনা গিয়েছে মনুয়ার মুখে। পুলিশ জানিয়েছে, এ সবের মধ্যেই গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মনুয়ার জীবনে আসে অজিত। ঘনিষ্ঠতা হয়। তার পরে সুপারি কিলার দিয়ে অনুপমকে খুনের ছক কষা হলেও পরে অজিতই খুন করবে বলে ঠিক হয়। তার পরে টাকাপয়সা নিয়ে সংসার পাতবে।
খুনের পরে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেয় মনুয়া। কারণ হিসেবে সে এক বার বলেছিল, পাপবোধ থেকে। অন্য বার জানায়, রাস্তা ‘সাফ’ হয়েছে বলে। অজিতও জানিয়েছে, খুনের পরদিন দক্ষিণেশ্বরে সে-ও গিয়েছিল।
অজিত জানিয়েছে, খুনের পরে তার জামাকাপড় রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। অনুপমের ঘরের বেসিনে রক্ত ধুয়ে সে মনুয়ার সঙ্গে দেখা করে অশোকনগরের বাড়ি ফিরে যায়।
কিন্তু উত্তেজনায় ওই রাতেই শোভাবাজারে চলে আসে। সেখানে মদ খায়। রাত কাটায় যৌনপল্লিতে। সকালে দক্ষিণেশ্বরে যায়। তবে পুজো দিতে নয়, রক্তে মাখা জামাকাপড় গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে।