বিক্ষোভ, প্রতিবাদে তপ্ত প্রথম পুর-অধিবেশন

তর্ক-বিতর্ক, চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে কাগজ ছোড়া আর তাঁকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়া— এ সব নিয়ে দিনভর সরগরম হয়ে ওঠে কলকাতা পুরসভার অধিবেশন পর্ব। বৃহস্পতিবার ছিল নয়া পুরবোর্ডের প্রথম অধিবেশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০০:১৮
Share:

মালা রায়ের ঘরের সামনে প্রকাশবাবু। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

তর্ক-বিতর্ক, চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে কাগজ ছোড়া আর তাঁকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়া— এ সব নিয়ে দিনভর সরগরম হয়ে ওঠে কলকাতা পুরসভার অধিবেশন পর্ব। বৃহস্পতিবার ছিল নয়া পুরবোর্ডের প্রথম অধিবেশন। সেখানে একটি প্রস্তাব তোলার জন্য ক’দিন আগেই চেয়ারপার্সন মালা রায়ের কাছে সেটি লিখিত ভাবে জমা দেন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। প্রস্তাবটি ছিল মালা রায়ের নিজের ওয়ার্ডে একটি কমিউনিটি হলের কর্তৃত্ব নিয়ে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত পুরবোর্ডে মালাদেবী কংগ্রেস কাউন্সিলর ছিলেন। তাঁর ওয়ার্ডে পুরসভার একটি কমিউনিটি হল বেসরকারি সংস্থার দখলে চলে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। সে সময়ে তৃণমূল কাউন্সিলর পারমিতা চট্টোপাধ্যায় ওই কমিউনিটি হলটি অধিগ্রহণের জন্য পুরসভার হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন। মেয়র সে দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই হলটি পুরসভা অধিগ্রহণ করবে। অর্থাৎ, প্রকাশবাবুর তোলা প্রস্তাবের সমাধান বছর খানেক আগেই হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রের দাবি। আর সেই কারণেই ওই প্রস্তাব বাতিল করা হয় বলে চেয়ারপার্সন মালা রায় প্রকাশবাবুকে জানিয়ে দিয়েছিলেন বলে পুর সূত্রের খবর।

তা সত্ত্বেও, এ দিন অধিবেশন কক্ষে, তাঁর প্রস্তাব বাতিলের কারণ জানতে চেয়ে চেয়ারপার্সনের কাছে জবাব দাবি করেন প্রকাশবাবু। মালাদেবীও জানিয়ে দেন, ওই বিষয়ে আগের বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন তা তোলা মানে সভার সময় নষ্ট। এই জবাব শুনেই নিজের হাতে থাকা কাগজ চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে ছুড়ে দেন প্রকাশবাবু। ওই আচরণে তেড়ে ওঠেন তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা। প্রকাশবাবুর বিরুদ্ধে সমস্বরে চিৎকার শুরু করেন সরকার পক্ষের কাউন্সিলরেরা। তা দেখে অধিবেশন কক্ষ বয়কট করেন কংগ্রেসের প্রকাশবাবু, সন্তোষ পাঠক-সহ চার কাউন্সিলর।

Advertisement

তার পরেই ওই চার কাউন্সিলর চেয়ারপার্সনের ঘরের দরজার সামনে বসে পড়েন। প্রকাশবাবু বলতে থাকেন, ‘‘চেয়ারপার্সনকে ঘরে ঢুকতে দেব না।’’ তাঁদের দাবি, মালাদেবী নিজের ওয়ার্ডের বিষয় বলে প্রস্তাবটি আটকে রেখেছেন। ওঁদের সেই অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন তৃণমূল নেতা তারক সিংহ।

বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ মালাদেবী অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে নিজের ঘরে পৌঁছতেই দেখেন, দরজায় বসে রয়েছেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। তিনি তাঁদের অনুরোধ করেন রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নাছোড়বান্দা প্রকাশবাবুরা। পুরসভার নিরাপত্তাকর্মীরাও তাঁদের সামাল দিতে পারেননি। চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয় চেয়ারপার্সনের ঘরের সামনে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে ওই পর্ব। দূর থেকে তা দেখেন মেয়রও। পরে পুরসভার দুই মেয়র পারিষদ তারক সিংহ এবং দেবাশিস কুমার সেখানে গিয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কোনও বক্তব্য থাকলে ভিতরে চেয়ারপার্সনের কাছে গিয়ে জানাতে বলেন। তার পরে শান্ত হন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। পরে কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক বলেন, ‘‘পরের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হবে বলে জানানো হয়েছে।’’ তবে অধিবেশন কক্ষে এবং চেয়ারপার্সনের ঘরের সামনে প্রকাশবাবুর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অতীন ঘোষ, তারকবাবু, দেবাশিসবাবু-সহ একাধিক মেয়র পারিষদ। তাঁদের বক্তব্য, অন্য ভাবেও প্রতিবাদ করা যেত।’’

এ দিন অধিবেশন ভাল ভাবে শুরু হলেও ছন্দপতন ঘটে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর রত্না রায় মজুমদারের কথায়। বিতর্কের সূত্রপাত বিরোধী দলনেত্রীর সম্মান দেওয়া নিয়ে। উপস্থিত কাউন্সিলরদের স্বাগত জানাতে গিয়ে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর রত্না রায় মজুমদার নিজেকে বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে দলের সম্মতি পত্রও জমা দেওয়া হয়েছে চেয়ারপার্সনের কাছে। তা শুনেই চিৎকার শুরু করেন তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা। হইচইয়ের মধ্যেই এক জন বলে ওঠেন, ‘‘কোন বিরোধী দলের নেত্রী আপনি?’’ তিনি জানান, বামফ্রন্টের। তা শুনেই চেয়ারপার্সন জানিয়ে দেন, পুরসভার নিয়মে বলা রয়েছে একক দল হিসেবে মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন না পেলে বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়া যাবে না। তাই রত্নাদেবীর দলের আবেদনও গৃহীত হয়নি। পরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেত্রীর সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। তবে বাম-সহ বিরোধী দলগুলির প্রতি পুরসভার নজর থাকবে। কোনও অসম্মান হবে না।’’

মেয়রের কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন সাংবাদিকদের কাছে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ইস্তাহার ও কর্মসূচির ভিত্তিতে বামফ্রন্ট হিসেবে আমরা ভোটে লড়াই করি। কোনও দল পৃথক ভাবে লড়াই করে না। এটা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথায় রাখা উচিত।’’ বিধানসভার উদাহরণ তুলে ধরে বিমানবাবু আরও বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের আমলে বিরোধী দলের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক বিধায়ক না থাকা সত্ত্বেও ওদের বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তা মাথায় রেখেই মেয়রকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করি।’’

প্রতিক্রিয়ায় মেয়র বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিধায়ক ভূপেন শেঠ মারা যাওয়ায় বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার সংখ্যা থেকে একটি আসন কম হয়ে যায় তৃণমূলের। তখন কিন্তু তৃণমূলকে বিরোধীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এটা বিমানবাবুদের মনে রাখা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement