—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শুধু হাসপাতাল চত্বরেই নয়। পুরো শহরেও পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা রয়েছে কি, যে নজরদারির বর্মে সুরক্ষিত বোধ করতে পারেন সাধারণ মানুষ?
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-কাণ্ডের পরে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে অনেকের মনে। এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সিসি ক্যামেরা নিয়ে আন্তর্জাতিক এক বেসরকারি সংস্থার করা সমীক্ষার কথাও। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রতি হাজার জনে কত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা রয়েছে, প্রতি বর্গ মাইলে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা কত—এমন হাজারো খুঁটিনাটি উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে প্রশাসন সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে আর জি করের এসএনসিইউ ও এনআইসিইউ ওয়ার্ডে নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা বসাতে দরপত্র ডাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অক্টোবরে দরপত্রের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে, ওই দু’টি ওয়ার্ডের জন্য তিনটি ‘সিসিটিভি সার্ভেল্যান্স সিস্টেম’-এর বরাত দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, অন্যত্র সিসি ক্যামেরা থাকলেও কেন ঘটনাস্থলেই সিসি ক্যামেরা নেই? বিশেষত যেখানে হাসপাতালে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সেমিনার রুম, অর্থাৎ ঘটনাস্থলেই শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল? বৃহস্পতিবার রাতে যেখানে শুতে যান নির্যাতিতাও।
এছাড়াও প্রশ্ন উঠছে, শহরের জনসংখ্যা অনুযায়ী যত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা থাকার কথা, তা-ও আছে কি? নাকি গোড়াতেই গলদ রয়ে গিয়েছে? আন্তর্জাতিক এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরে প্রায় ১৩ হাজার সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাপ্ত সংখ্যার ভিত্তিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জনবহুল শহরে প্রতি হাজার জনে কত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা রয়েছে, প্রতি বর্গ মাইলে তার সংখ্যা কত, এমন নানা তথ্য রয়েছে ওই সমীক্ষায়। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইউএন ওয়ার্ল্ড আর্বানাইজ়েশন প্রসপেক্টস’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনে শহরে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা ০.৮৬। সমীক্ষা অনুযায়ী হায়দরাবাদ, ইন্দোর, দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের একাধিক শহরে প্রতি হাজার জনে ওই সংখ্যা যথাক্রমে ৮৩.৩২, ৬০.৫৭, ১৯.৯৬ এবং ৩.৬৫।
‘ক্যামেরা বেসড সার্ভেল্যান্স’-এ বিশেষজ্ঞ, এক বেসরকারি সংস্থার চিফ টেকনিক্যাল অফিসার তুহিন বসুর কথায়, ‘‘অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতার জনসংখ্যার অনুপাতে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা নগণ্য। ফলে সবচেয়ে আগে কোথায় কত সিসি ক্যামেরা রয়েছে, আরও কতগুলি দরকার, তার পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা হওয়া দরকার। ভয়াবহ এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকানো নিশ্চিত করা দরকার সব থেকে আগে।’’