Indian Museum

Indian Museum: ঐতিহ্য রক্ষায় কতটা কাজের বন্দুকের জোর, উঠছে সেই প্রশ্নও

শনিবার সন্ধ্যায় এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর পরে সংগ্রহশালা চত্বরে কোথায়, কাদের মোতায়েন করা উচিত, তা নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার আভাস মিলছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪১
Share:

অকুস্থল: জাদুঘরের এখানেই একে-৪৭ হাতে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ধৃত সিআইএসএফ জওয়ান। রবিবার সেখানে প্রহরায় তাঁর সহকর্মীরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ব্রিটিশ মিউজ়িয়ামের গ্যালারির সামনে সচরাচর দেখা যায় না বন্দুকধারী রক্ষীদের। প্যারিসের লুভ বা আমেরিকার স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনেও সেটাই দস্তুর। দেশের প্রাচীনতম জাদুঘর কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজ়িয়াম প্রাঙ্গণে গুলি চলার ঘটনার পরে অমূল্য প্রত্নবস্তু ভরপুর সংগ্রহশালাগুলির নিরাপত্তার ধাঁচ নিয়ে তাই নানা প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

জাদুঘরের এক কর্তাই বলছেন, “গুলি চলেছে মিউজ়িয়ামের মূল ভবনের বাইরে। কিন্তু সংগ্রহশালার ভিতরে বিভিন্ন গ্যালারির সামনেও একে-৪৭ নিয়ে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা থাকেন। একই কাণ্ড সেখানে ঘটলে শুধু প্রাণহানিই নয়, অমূল্য প্রত্নবস্তুরও ক্ষতি হতে পারত।” অনেক দেশই ঐতিহ্যস্থল বা প্রত্নসামগ্রীর রক্ষণাবেক্ষণে বন্দুকের আস্ফালনে ভরসা রাখে না। এর জন্য সংগ্রহশালাগুলির জন্য ঐতিহ্য রক্ষায় তালিমপ্রাপ্ত বিশেষ সুরক্ষা বাহিনীও গড়ে তোলা হয়। কলকাতার জাদুঘর চত্বরে সিআইএসএফ জওয়ানের বন্দুক-তাণ্ডবের পরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অন্দরেই এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে।

মিউজ়িয়ামের এক কর্তার ব্যাখ্যা, সংগ্রহশালাগুলি শহর বা দেশেরই পরিচয়। জঙ্গি নিশানার ভয়ও থাকে। কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা ভারতীয় জাদুঘর উচ্চ সুরক্ষা তল্লাট হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু শুধু অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী রক্ষী সব জায়গায় বসিয়েই সমস্যার সমাধান না-ও হতে পারে। যে কোনও পরিস্থিতিতে প্রত্নবস্তুগুলির ক্ষতিও ঠেকাতে হবে।” এ রাজ্যের শিক্ষাজগতের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিও বলছেন, “লুভ বা ব্রিটেনের নামজাদা মিউজ়িয়ামগুলির সামনেও বন্দুকধারী দেখিনি। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাটা মূলত প্রযুক্তি-নির্ভর।” শনিবার সন্ধ্যায় জনৈক হেড কনস্টেবলের এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর পরে সংগ্রহশালা চত্বরে কোথায়, কাদের মোতায়েন করা উচিত, তা নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার আভাস মিলছে।

Advertisement

বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি বা ভারতীয় জাদুঘরে বুদ্ধমূর্তি চুরির মতো ঘটনার জেরে একদা মিউজ়িয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে সিআইএসএফ মোতায়েনের দাবি উঠেছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯-এ পর পর সিআইএসএফ বসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং জাদুঘর প্রাঙ্গণে। ভিক্টোরিয়ায় ১১৩ জন, জাদুঘরে ৫৭ জন আধা সামরিক কর্মী রয়েছেন। দু’জায়গাতেই ব্যারাকও রয়েছে। জাদুঘরের ঘটনাটির পরেই সিআইএসএফ এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেন সেখানকার ডিরেক্টর অরিজিৎ দত্তচৌধুরী, এডুকেশন অফিসার সায়ন ভট্টাচার্য এবং কিউরেটর অর্ণব বসু। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং কলকাতার রাজভবনে (জাদুঘরের অছি বোর্ডের প্রধান হলেন রাজ্যপাল) তাঁরা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। সায়ন বলেন, “রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্দেশিকা এলে তা কার্যকর হবে।”

দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের মধ্যে ‘মউ’-এর ভিত্তিতে সিআইএসএফ-এর জন্য নানা কর্মসূচির ব্যবস্থা করেন জাদুঘর বা ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। জাদুঘরের এক কর্তা বলছেন, “মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বা তালিমের কর্মসূচি দেখিনি। কোনও নির্দেশ এলে সে বিষয়েও সহযোগিতা করব।” প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব (বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ) জহর সরকার বলছেন, “যা ঘটেছে, তাতে সিআইএসএফ-এর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement