এক চিলতে ঘর থেকে স্বপ্ন উড়ান মন্দিরার

চাকরি পাওয়ার পরে কান্নায় গলা বুজে এসেছিল। বাড়ি ফিরে বাবা-কে জড়িয়ে ধরে অনেকটা কেঁদে নিয়েছিলেন মন্দিরা। কতই বা বয়স! মেরেকেটে ২১। ছোট থেকে অভাব আর দারিদ্র, কষ্ট আর যন্ত্রণাই ছিল সঙ্গী।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪০
Share:

মন্দিরা মণ্ডল

চাকরি পাওয়ার পরে কান্নায় গলা বুজে এসেছিল। বাড়ি ফিরে বাবা-কে জড়িয়ে ধরে অনেকটা কেঁদে নিয়েছিলেন মন্দিরা।

Advertisement

কতই বা বয়স! মেরেকেটে ২১। ছোট থেকে অভাব আর দারিদ্র, কষ্ট আর যন্ত্রণাই ছিল সঙ্গী। দমদম ক্যান্টনমেন্টের এক চিলতে ঘরে বেড়ে ওঠা, ছুতোর মিস্ত্রির মেয়ের আগামী দিনও ছিল অন্ধকারে ঢাকা।

এমন এক মেয়ে আজ ছুঁয়েছে আকাশ। মুম্বইয়ে গো এয়ারের প্রশিক্ষণ চলছে এখন। মাস তিনেকের মধ্যেই বিমানসেবিকার তকমা পেতে চলেছেন মন্দিরা মণ্ডল। এখন ১০ হাজার, পাকা চাকরি হলে ৫০ হাজার টাকা বেতন! মুম্বই থেকে ধরা গলায় মন্দিরা বলেন, ‘‘বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন। বাবা অসুস্থ। আগে বাবার চিকিৎসা করাব। তার পরে বাকি সব।’’ ইতিমধ্যেই বাবাকে ভেলোরে পাঠিয়েও দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য।

Advertisement

শিয়ালদহে একটি কাঠের দোকানে কাজ করতেন মন্দিরার বাবা। সঙ্গে ছিল শ্বাসকষ্ট, সুগার ও রক্তচাপের সমস্যা। মন্দিরার যখন ক্লাস টেন, তখন থেকেই বাড়িতে বসে বাবা। লোকের বাড়িতে আয়ার কাজ করে সংসারের হাল ধরেন মা। মন্দিরা একমাত্র সন্তান। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে সেই মেয়েকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করান বাবা-মা। তার পরে মন্দিরা বিমানসেবিকাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ফ্র্যাঙ্কফিন-এ ঢোকেন। তাঁর অধ্যবসায় দেখে স্কলারশিপ দেয় ফ্র্যাঙ্কফিন। সংস্থার চেয়ারম্যান কুলবিন্দর সিংহ কোহলি জানান, যাঁরা তাঁদের সংস্থার প্রশিক্ষণের জন্য ঢোকেন, তাঁদের মধ্যে বিমানসেবিকার চাকরির শিকে ছেঁড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের। বাকিদের অনেকেই চলে যান হোটেল পরিষেবায়, কেউ যান পর্যটনে। মন্দিরার মতো একেবারে নিম্নবিত্ত ঘর থেকে উঠে আসা মেয়েরা ইদানীং অনেক বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন প্রশিক্ষণে। তাঁদের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে অনেককেই স্কলারশিপ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ফ্র্যাঙ্কফিন।

কুলবিন্দরের কথায়, ‘‘কষ্ট করে উঠে আসা মেয়েদের মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করার তাগিদ বেশি থাকে। এ বার আমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শহর থেকে এই ধরনের প্রতিভাবান মেয়েদের তুলে আনার কথা চিন্তা করছি।’’ পূর্ব ভারতে আরও ৩০টি সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বর্ধমান, আসানসোল ও দার্জিলিং রয়েছে। কলকাতায় তিনটি আছে। আরও পাঁচটি নতুন সেন্টার হবে কলকাতাতেও।

বিমান পরিবহণের ব্যবসা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কেন্দ্র সম্প্রতি আঞ্চলিক রুটে বিমান চালানোর উপরে জোর দেওয়ায় নতুন নতুন বিমানসংস্থা এগিয়ে আসছে। ইন্ডিগো-র মতো সংস্থা আরও ১৫০টি নতুন বিমান আনছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাইলট ও বিমানসেবিকাদের চাহিদাও। দু’বছরে একা এমিরেটসই ৬০০ বাঙালি বিমানসেবিকাকে চাকরি দিয়েছে বলে জানালেন কুলবিন্দর। তাঁর কথায়, ‘‘বিমান পরিবহণে প্রচুর যুবক-যুবতী চাকরি পেতে চলেছেন।’’ তার মধ্যে অনেক মন্দিরাও থাকবেন বলে আশা এই দিল্লিবাসী ব্যবসায়ীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement