প্রতীকী ছবি।
সাইবার মামলায় ১০ বছর পর সাজা ঘোষণা! প্রেমিকার অপমানের প্রতিশোধ নিতে তাঁর বান্ধবীর আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন গড়িয়ার যুবক। কিছুতেই ওই যুবকের পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। কে এবং কেন ওই তরুণীর ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট করছেন, তা-নিয়েও ছিল বিস্তর ধোঁয়াশা। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে সাইবার অপরাধীর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করল আদালত।
কী ঘটেছিল?
২০১১ সালে ওই তরুণীর বাবা যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানান, তাঁর মেয়ের নামে কেউ বা কারা ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মেয়ের ছবি ব্যবহার করে ওই পেজে বলা হচ্ছে, তাঁর মেয়ে যৌন সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক। যোগাযোগ করুন।
পরে মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে ইউআরএল এবং লগইন আইপি অ্যাড্রাস-এর বিষয়ে তথ্য চায় তদন্তকারী সংস্থা। সেই তথ্য হাতে আসার পর, তার ভিত্তিতে অভিযুক্ত কোন সংস্থার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্রের মাধ্যমেই যুবকের নাম-ঠিকানাও জানা যায়। আটঘাট বেঁধে শুদ্ধচিত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই যুবকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা।
বাজেয়াপ্ত করা হয় কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল, মোবাইল ফোন-সহ বিভিন্ন জরুরি নথিপত্র। সেগুলি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল) পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। শুদ্ধচিতের বিরুদ্ধে সাইবার ধারায় (৬৬এ,৬৬বি,৬৬ডি,৬৭এ) চার্জশিটও দেয় সিআইডি।
শুদ্ধচিতকে জেরা করে জানা যায়, সঙ্গে এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শুদ্ধচিতকে প্রেমিকা জানান, এক বান্ধবী তাঁকে অপমান করেছেন। এই বিষয়টি জানার পরই প্রেমিকার বান্ধবীর ছবি জোগাড় করে ফেসবুকে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে উল্লেখ করে তা ছড়িয়ে দেয় শুদ্ধচিত।
কিন্তু সে যে অপরাধ করেছে, তা প্রমাণ করতে বেগ পেতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে। সিআইডি-এর তরফে ২০১৬ সালে সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। ছবি এবং তথ্য বিশ্লেষণের করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ফের পাঠানো হয় সিএফএসএল-এ। অবশেষে আলিপুর আদালত সেই সব তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে সাজা ঘোষণা করে। অভিযুক্তের ১ বছরের জেল এবং দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। সরকারি আইনজীবী বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে এই মামলার সাজা ঘোষণা হয়েছে। পাঁচটি ছবি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। বাজেয়াপ্ত হওয়ায় কম্পিটারের হার্ডডিস্কের ডেটা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সেগুলি ওই যুবকই ব্যবহার করেছে।”