ইসরোর মহাকাশ প্রদর্শনী। গত সেপ্টেম্বরে, বিধান শিশু উদ্যানে। ফাইল চিত্র
ভাবনার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে। অবশেষে তা চূড়ান্ত রূপ নিতে চলেছে কয়েক মাসের মধ্যে।
তা হয়ে গেলে এ বারই প্রথম ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন তথা ইসরো-র একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কলকাতায় থিতু হবে। উত্তর কলকাতায় উল্টোডাঙার কাছে বিধান শিশু উদ্যানে এই প্রদর্শনীটি বসাতে রাজি হয়েছেন ইসরো কর্তৃপক্ষ।
এমনিতে দেশ জুড়ে ইসরো-র বিভিন্ন কেন্দ্রে ছড়িয়ে আছে স্কুলস্তরের পড়ুয়াদের জন্য আকর্ষক ঢঙে পেশ করা বেশ কিছু প্রদর্শনী। এর মধ্যে বেঙ্গালুরু, শ্রীহরিকোটা, তিরুঅনন্তপুরম বা আমদাবাদের প্রদর্শনীতে উন্নত ধাঁচের বিজ্ঞান সংগ্রহশালার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, আমদাবাদে বিক্রম সারাভাই স্পেস এগজিবিশন (মহাকাশ প্রদর্শনী)-এ কৃত্রিম উপস্থাপক, বাস্তবের বিচিত্র বিভ্রম, সিডি প্রদর্শনের প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদি রয়েছে। ওই প্রদর্শনী কেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী হিমাংশু পাণ্ড্য কলকাতার সংগ্রহশালাটি ঢেলে সাজার ভার নিয়েছেন। সোমবার আমদাবাদ থেকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘কলকাতায় মূলত স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞান ও ইসরো-র কর্মকাণ্ড নিয়ে উৎসাহ তৈরিতে জোর দেওয়া হবে।’’ বেশ কিছু স্থির মডেলের প্যানেল এবং পৃথিবী পরিক্রমায় উপগ্রহের নড়াচড়া বোঝানোর সচল মডেল রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। হিমাংশুবাবুর কথায়, ‘‘মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার নানা কাজের দিক ছাড়াও প্রদর্শনীটি কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে গবেষণার উপকারিতা বোঝাবে। কী ভাবে উপগ্রহের মাধ্যমে দেশের নানা ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা যায়, তাও বোঝানো হবে। বাংলাতেও সব কিছু বোঝার সুযোগ থাকবে।’’ তাঁর আশা, এই প্রদর্শনীটি দেখে ভবিষ্যতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা উৎসাহ পাবেন, ছোটদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতেই কার্যকর হবে কলকাতার প্রদর্শনী।
গত বছর সেপ্টেম্বরে বিধান শিশু উদ্যানে ইসরো-র একটি মহাকাশ বিজ্ঞান প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। কলকাতার ২৫০টি স্কুলের ৩০ হাজার পড়ুয়ার উৎসাহ দেখেই স্থায়ী প্রদর্শনী গড়ার কথা ভাবেন উদ্যান কর্তৃপক্ষ। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে বাছাই জনা ৩০ পরে সুযোগ পান আমদাবাদের প্রদর্শনী কেন্দ্রটি ঘুরে দেখার। এই সময়েই ইসরো স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার-এর অধিকর্তা দীপক মিশ্রের সঙ্গে কথা হয় বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদারের। কলকাতায় স্থায়ী প্রদর্শনীটির জন্য সব ধরনের সহায়তায় রাজি হয়ে যান ইসরো কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ইসরো-র বিজ্ঞানী হিমাংশু পাণ্ড্য গৌতমবাবুকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, স্থায়ী প্রদর্শনীটির পরিকাঠামোর খুঁটিনাটি তাঁদের জানাতে। হিমাংশুবাবু এ দিন জানান, আর তিন-চার দিনের মধ্যেই তিনি কলকাতায় প্রদর্শনীর পরিকাঠামো দেখতে আসার দিন ঠিক করবেন। সব কিছু মনের মতো হলে, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই ইসরো-র প্রদর্শনীটি কলকাতায় শুরু করার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। উদ্যান কর্তৃপক্ষের তরফে সম্পাদক গৌতমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘একটি নতুন দোতলা ভবনের কাজ প্রায় শেষের মুখে। তাতে কমবেশি ১০ হাজার বর্গ ফুট জায়গা মিলবে প্রদর্শনীটির জন্য।’’ এই প্রদর্শনী শুরু হলে কলকাতার স্কুলপড়ুয়াদের জন্য নিয়মিত ইসরো-র তত্ত্বাবধানে মহাকাশ বিজ্ঞান বা রকেটপ্রযুক্তি নিয়ে পাঠ্যক্রম বা কর্মশালা চালু করা যাবে বলেও আশাবাদী উদ্যান কর্তৃপক্ষ। ইসরো-র তরফে হিমাংশুবাবুও বিষয়টিতে আশ্বাস দেন। তবে তিনি বলেন, সব সময়ে ইসরো স্কুলপড়ুয়াদের পাঠ্যক্রমের জন্য লোকবল জোগাতে হয়তো পারবে না। তবে পাঠ্যক্রমের রূপরেখা তাঁরাই ঠিক করে দেবেন।
এমনিতে কলকাতার নিউ টাউনে ইসরো-র পূর্বাঞ্চলীয় রিমোট সেন্সিং কেন্দ্র রয়েছে। তাতে নানা ধরনের গবেষণার কাজ চলবে। কিন্তু স্কুলপড়ুয়াদের মহাকাশ বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে উৎসাহিত করতে কাজে আসবে স্থায়ী প্রদর্শনীটিই।