প্রশাসনের হুঁশ ফেরায়নি শিশুর মৃত্যুও

আবির্ভাবের বাড়ির গলির মুখে বাঁধানো পুকুরের জলই যে মশার আতুঁড়ঘর, তা এ দিনও মনে হয় বুঝতে পারেননি পুরসভার আধিকারিক কিংবা প্রশাসন।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৩
Share:

(বাঁ দিকে) এ ভাবেই জঞ্জালের স্তূপ জমে ছিল বিজয়গড়ের পল্লীশ্রী এলাকায়। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হওয়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলেন জঞ্জাল, পড়ে থাকা গাড়ি। ছড়ান ব্লিচিং পাউডার (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শিশুর মৃত্যুতে নড়ে বসলেন পড়শিরা। প্রশাসন তবুও উদাসীন।

Advertisement

শনিবার ভোরে বিজয়গড় পল্লীশ্রীর বাসিন্দা বছর দশের আবির্ভাব মজুমদারের মৃত্যুর পরে এলাকার আর্বজনা পরিষ্কার করল প্রশাসন। সরানো হল পাড়ার খালি জায়গায় পড়ে থাকা ভাঙা গা়ড়ি, জঞ্জাল। ছড়ানো হল ব্লিচিং পাউডার!

কিন্তু আবির্ভাবের বাড়ির গলির মুখে বাঁধানো পুকুরের জলই যে মশার আতুঁড়ঘর, তা এ দিনও মনে হয় বুঝতে পারেননি পুরসভার আধিকারিক কিংবা প্রশাসন। পুরসভা পুকুরটি ঘিরে, বাঁধানো ঘাট করে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই জলে জমেছে প্লাস্টিকের বোতল, আর্বজনা। ঘাটের কাছে পৌঁছতে না পৌঁছতেই মশার দঙ্গল পুরো যেন ঘিরে ধরল। শুধু সেখানে নয়, এলাকার জল নিকাশির মুখের উপরে দুপুরেই ভন ভন করছে মশা।

Advertisement

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুকুরটি বছরের পর বছর এ ভাবেই রয়েছে। কোনও সংস্কার হয়নি। মাঝেমাঝে পুরসভার তরফ থেকে ব্লিচিং ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী পুকুরটির খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ওটি আসলে একটি ডোবা ছিল। আশপাশের বাড়ির জল-নিকাশি এসে পড়ত ওখানে। পরে ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা করে সেই জল পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং চারপাশের সঙ্গে পুকুরটি সংস্কার করে ঘেরা হয়। কিন্তু সেই নিকাশি নালাও অনেক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় নোংরা জল এখনও পড়ে পুকুরে। তিনি বলেন, ‘‘ওই পুকুরের জল পরিষ্কার করতে প্রচুর খরচ হয়। তবু লাভ হয় না। আমি জানি ওটি মশার আঁতুড়ঘর। কিন্তু কী করে পরিস্থিতি বদলাবে, জানি না।’’

বিজয়গড় ৫-এর বাসিন্দা সোমা সাহা অবশ্য শুধু পুরসভা বা প্রশাসনকে দায়ী করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশে খালি জায়গা আছে। সেখানেই অনেকে নোংরা ফেলে যান। নিষেধ করলে পাল্টা ‘মন্তব্য’ ছোড়েন। শুধু প্রশাসন-পুরসভাকে দায়ী করে কী হবে?’’

শুধু পল্লীশ্রী নয়। বিজয়গ়ড়, বাঘা যতীন, যাদবপুরের বিক্রমগড় থেকে শুরু করে গল্ফগ্রিনের মতো এলাকাতেও একাধিক জায়গায় আর্বজনা, জঞ্জাল, ডাবের খোল থেকে শুরু করে ভাঙা গাড়ি, রিকশাও পড়ে রয়েছে। বিক্রমগড়ে ঢোকার রাস্তার দু’পাশেই খালি জায়গায় জমা হয়েছে আবর্জনার স্তূপ। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে পুরসভার জঞ্জাল সংগ্রহের গাড়িতে ফেলতে না পারলে বাড়ির সব আবর্জনা এই খালি জায়গায় ফেলে যান বলে অভিযোগ। রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি জায়গাই পুরোপুরি ‘ভ্যাটে’ পরিণত হয়েছে। পাশেই রয়েছে জলাশয়। বেশ কিছু বাসিন্দা জানালেন, ভাঙা গাড়িগুলি দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। কেউ সরায় না। এ দিকে পুরসভার তরফ থেকে এই সব জায়গাতেই সচেতন করার জন্য টাঙানো হয়েছে ‘জ্বর হলে যেন পুরসভার ক্লিনিকে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়’ লেখা বোর্ড। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, জ্বর যাতে না হয়, তার কোনও ব্যবস্থা আগে থেকে নেওয়া হয় না। অভিযোগ, শুধু ব্লিচিং ছড়িয়ে কোনও লাভ হবে না। মশার তেল দেওয়া দরকার। কিন্তু পুরসভার তরফ থেকে অনেক জায়গাতেই সেই তেল দেওয়া হয় না বলেই অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা প্রচুর তেল ছড়ায়। কিন্তু মানুষ নিজে সচেতন না হলে এই পরিস্থিতি বদলাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement