এ ভাবেই শাসাচ্ছিল গোপালের দল। ছবি: সায়কের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সৌজন্যে।
ভরা বাজারে মারধর করা হল টলিউড অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তীকে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়া বাজার এলাকায়। কিল-চড়-ঘুসি তো ছিলই, সায়ক এবং তাঁর এক বন্ধুকে পেটানো হল বাঁশ দিয়েও। সায়কদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা লোকজনকেও ছাড়েনি দুষ্কৃতীরা। অশ্রাব্য গালিগালাজ আর তাণ্ডবের নেতৃত্ব দিলেন তৃণমূলের স্থানীয় দাপুটে নেতা গোপাল সিংহ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আরও দুই সাগরেদ। গোপালকে রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন পলাতক।
শুক্রবার রাত ১০টা-সওয়া ১০টা। এক বন্ধুর সঙ্গে স্কুটি নিয়ে গড়িয়া বাজারে গিয়েছিলেন সায়ক। গড়িয়া অটোস্ট্যান্ডের কাছে স্কুটি রেখে তাঁরা বাজার করছিলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে স্কুটি নিতে যান তাঁরা। সায়কের কথায়, তখনই কয়েকজন অটোচালক এসে তাঁদের গালিগালাজ করতে থাকেন। বলতে থাকেন, এটা স্কুটি রাখার জায়গা নয়, কেন রাখা হয়েছে! তর্কাতর্কি শুরু হয়। অটোচালকদের একটা অংশ অবশ্য তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সায়ক।
তর্ক চলতে চলতেই আচমকা শুরু হয় মার। নেতৃত্বে গোপাল। সায়ক এবং তাঁর বন্ধুকে বাঁশ দিয়ে মারা হয়। এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় দু’তিনজন অটোচালকেরও মাথা ফাটে। সায়কের কথায়, ‘‘ওখানে যে দাঁড় করিয়ে এ ভাবে মারবে আমি ভাবিনি। মদ খেয়ে ছিল প্রত্যেকেই। ভয় লাগছে এখনও।’’
আরও পড়ুন, শহরে ফের অঙ্গপ্রতিস্থাপন, সঞ্জীব-মৌমিতার মধ্যেই বেঁচে থাকবে মল্লিকা
মার খাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলের অবস্থা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সায়ক। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তাণ্ডবকারীরা তখনও শাসিয়ে চলেছে আশপাশের লোকজনকে, সঙ্গে গালিগালাজ। এর পর স্থানীয়রাই সায়ক আর তাঁর বন্ধুকে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সার পর সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন, ঝুলন কবে, জানে না কুমোরটুলি
গোটা ঘটনায় যাঁর দিকে প্রধান অভিযোগ, সেই গোপাল সিংহ গড়িয়া বাজার কমিটির সদস্য এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। অটো ইউনিয়নেও তাঁর যথেষ্ট দাপট। অটোচালকদের অনেকেরই অভিযোগ, এর আগেও যাত্রী বা অটোওয়ালাদের সঙ্গে নানা সময়ে তিনি ঝামেলা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে। গোপালের মূল মদতদাতা স্থানীয় কাউন্সিলার বিভাস মুখোপাধ্যায় বলেও স্থানীয়দের অনেকের দাবি। বিভাসের মদতেই নাকি গোপালের এই দাদাগিরি। শুক্রবার সন্ধেতেও অটোচালকদের সঙ্গে গোপালের একপ্রস্থ ঝামেলা হয়।
টলিউড অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তী।
গোপালই রাতে গোলমালের সময় সায়ককে প্রথম চড় মারেন। সোনারপুর থানার পুলিশ গতকাল রাতেই গোপালকে গ্রেফতার করে। গোপাল ছাড়া আর যে দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা হলেন সোনারপুর রাজপুর পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা বিল্ডিং মেটিরিয়ালসের সাপ্লায়ার বিজয় মণ্ডল এবং স্থানীয়অটো ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত প্রবীর ঘোষ। এঁরা প্রত্যেকেই মদ্যপ ছিলেন বলে অভিযোগ। বিজয় এবং প্রবীরের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বারুইপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিক।