জিতু কমল
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বারবারই নির্দেশ দিচ্ছেন মানুষ সমস্যায় পড়লে গড়িমসি না করে পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু তাঁর নির্দেশ কি আদৌ কানে তুলছে তাঁর বাহিনী? সেই প্রশ্নই উঠল বৃহস্পতিবার রাতের একটি ঘটনাকে ঘিরে। এ বার রাতের শহরে হেনস্থার শিকার হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে গা-ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ আনলেন বাংলা ধারাবাহিকের এক অভিনেতা।
জিতু কমল নামে ওই অভিনেতার অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে রাতের শহরে তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল কয়েক জন যুবক। তিনি প্রতিবাদ করলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ, সময় মতো খবর দিলেও পুলিশ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। উল্টে নিজেদের এলাকা নয় বলে একাধিক থানা দায় এড়াতে চেয়েছে। যদিও কলকাতা পুলিশের দাবি, রাত ৩টে ১০ মিনিটে অভিযোগ দায়ের করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। মালিক ও সওয়ারির খোঁজ চলছে।
কী ঘটেছিল? অভিনেতার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শুটিং সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। পঞ্চসায়র রোডে ওই ঘটনা ঘটে। জিতুর অভিযোগ, ‘‘রাতে শুটিং শেষ করে ফিরছি। একটি বহুতলের সামনে মত্ত অবস্থায় কয়েক জন গাড়ি নিয়ে আমার গাড়িতে ধাক্কা মারেন। তার পরে শুরু হয় গালাগালি দেওয়া। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।’’ ফেসবুকেই গাড়ির কিছু ছবি-সহ ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। তাতে দেখা যায় গাড়ির গায়ে একাধিক ধাক্কা লাগার দাগ। এর পরে ফেসবুক লাইভে জিতু জানান, রাত দেড়টা নাগাদ তিনি বাইপাস সংলগ্ন একটি স্টুডিয়ো থেকে শুটিং শেষ করে গাড়ি নিয়ে বার হন। তখন একটি গাড়ি তাঁর গাড়িকে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করে। জিতুর অভিযোগ, গাড়িটিকে তিনি ধাওয়া করলে সেটি দাঁড়িয়ে পড়ে। কেন তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারা হল, তা জানতে চাইলে ওই গাড়ির চালক ও যাত্রীরা তাঁকে গালিগালাজ করেন। তিনি ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিয়ো করে পুলিশে জানাবেন বলতেই তাঁকে পাল্টা খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গাড়ির চালক পিছনের আসনের নীচে থেকে কিছু একটা বার করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ।
গত মাসে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া-ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্ত বেপরোয়া কয়েক জন বাইক আরোহীর হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার কড়া নির্দেশ ছিল, কেউ অভিযোগ জানাতে এলে নিজেদের এলাকা নয় বলে কোনও থানা দায় এড়াতে পারবে না। কিন্তু তার পরেও দু’টি ঘটনায় অভিযোগকারীদের থানায়-থানায় ঘুরতে হয়েছিল।
যদিও অভিনেতা জিতু কমলের অভিযোগ, ঘটনার পরেই তিনি লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করেন। সেখান থেকে বলা হয় স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানানো হচ্ছে। অভিযোগ, পূর্ব যাদবপুর, পাটুলি এবং অন্য একটি থানা থেকে তাঁকে ফোনে জানানো হয় যে ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় পড়ে না। এ ভাবে আধ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে পঞ্চসায়র থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
তবে জিতুর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চসায়র থানা থেকে সব শুনে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। এক পুলিশকর্মী আমায় সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে বলেন। এবং তাঁরা শুক্রবার ব্যবস্থা নেবেন বলেন।’’ বিস্মিত অভিনেতার কথায়, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে আসা পুলিশকর্মীদের বলি গাড়িটি সামনের উপহার আবাসনে ঢুকেছে। আপনাদের গাড়ির নম্বর দিচ্ছি। আপনারা চালক ও আরোহীকে এখনই ডেকে ব্যবস্থা নিন।’’
জিতুর দাবি, পুলিশ জানায় নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী থাকায় আবাসনের ভিতরে তারা ঢুকতে পারবে না! তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেউ খুন করে আবাসনে ঢুকে গেলেও কি পুলিশ বলবে নিরাপত্তারক্ষীর জন্য তারা ভিতরে ঢুকবে না?’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (পূর্ব ডিভিশন) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘মাঝরাতে শুধুমাত্র একটি গাড়িকে ধাক্কা মারার জন্য আবাসনের সকলকে ডেকে তুলে গাড়ির মালিককে খোঁজা সম্ভব ছিল না। তবে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছেই ওঁকে অভিযোগ জানানোর জন্য থানায় যেতে বলেছিল। উনি নিজে ক্লান্ত জানিয়ে থানায় যেতে চাননি। পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল না।’’