গার্ডেনরিচের বিপর্যয় নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বিপর্যয়ের ঘটনায় এ বার বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মধ্যরাতে বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। সেই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বিরোধীদের উদ্দেশে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেকের বক্তব্য, পরে রাজনীতি করার সময় পাওয়া যাবে। আপাতত যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের উদ্ধারে নজর দিতে হবে সকলকে।
বিরোধীদের অভিযোগ, গার্ডেনরিচে যে বাড়িটি ভেঙে পড়েছে, সেটি বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল। ঘটনাচক্রে, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দর এলাকার মধ্যে পড়ে। ফিরহাদ কলকাতা পুরসভার মেয়র এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীও। তিনিও বিরোধীদের বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। তাঁর নাকের ডগায় কী ভাবে পুরসভার অনুমোদন ছাড়া বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাসকদল তৃণমূলও তার জবাব দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শুভেন্দুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিষেক বলেন, ‘‘যে সব বিরোধী নেতা এত প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের বলব, রাজনীতি পরে করুন। এই মুহূর্তে আটকে পড়াদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই ঘটনাটা নিয়ে এখন রাজনীতি করা ঠিক হবে না। এ রকম যাতে আর না ঘটে, সেটাই দেখতে হবে আমাদের। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
কী ভাবে বেআইনি নির্মাণ আটকানো সম্ভব নয়, তা-ও জানিয়েছেন অভিষেক। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা রুখতে পুরসভা, প্রশাসন এবং আদালতের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।’’
রবিবার রাত ১২টা নাগাদ গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। বেশ কয়েকটি টালির চালের বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। রাতেই সেখানে পৌঁছন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাচক্রে, যিনি ওই এলাকার বিধায়কও। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা সারা রাত এলাকায় ছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিছু দিন আগে নিজের বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে চোট পেয়েছেন তিনি। কপালে ব্যান্ডেজ নিয়েই সকাল সকাল গার্ডেনরিচে যান মমতা। এলাকা ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। মন্ত্রীরা সারা রাত এখানে ছিলেন। প্রোমোটারদের একাংশ বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করেন। তার আগে ভাবা দরকার, আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের যাতে ক্ষতি না হয়। আমি শুনলাম, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই বহুতলটি তৈরি করা হয়নি। এখন রমজান মাস চলছে। সকলে উপোস করে থাকেন। তা-ও সারা রাত এলাকার মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর, দমকল, পুলিশ, কাউন্সিলররা সারা রাত ধরে কাজ করেছেন।’’ ফিরহাদ জানান, সরকারের তরফে মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন মমতাও।
গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, বাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তৃণমূল সরকারে আসার পর থেকেই কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি জলাজমি বেআইনি ভাবে ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ এবং তৃণমূল নেতাদের মদতেই এই বেআইনি কাজগুলি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, কারণ কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে বাধা আসেনি। বিরোধী দলনেতার দাবি, বর্তমানে শুধু গার্ডেনরিচেই বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা ৮০০-র বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকাটি ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’। ওঁর এলাকায় ওঁর নাকের ডগা দিয়ে এই বেআইনি কাজ হচ্ছে আর উনি কিছু জানেন না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’’
পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং এলাকার মানুষ, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, বেআইনি কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সকলকে শাস্তি দেওয়া হবে। দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’