ধর্মতলায় ‘অভয়া পরিক্রমা’ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বচসা আন্দোলনকারীদের। — নিজস্ব চিত্র।
সপ্তমীর কলকাতাতেও বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচি পালন করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। বৃহস্পতিবার তাঁদের গন্তব্য ছিল মূলত উত্তর কলকাতা। অভিযোগ, ষষ্ঠীর মতো সপ্তমীতেও ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মসূচিতে দফায় দফায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে। যদিও সেই ব্যারিকেড পেরিয়ে মিছিলের একাংশকে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। কলেজ স্কোয়্যারের মণ্ডপের সামনে মিছিল পৌঁছলে পুলিশের পাশাপাশি পুজো উদ্যোক্তাদের তরফেও তাঁদের ভিতরে ঢুকতে বারণ করা হয়।
গত শনিবার রাত থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। রবিবার সেখানে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের আরও এক জুনিয়র ডাক্তার। এই পরিস্থিতে ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচিতে মিনিডোরে করে আরজি কর এবং জয়নগরের নির্যাতিতার ‘প্রতীকী মূর্তি’ নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার সিদ্ধান্ত নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তাঁরা দফায় দফায় বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলা থেকে উত্তর কলকাতার মণ্ডপগুলিতে পরিক্রমা করার কথা ছিল তাঁদের। সঙ্গে ছিলেন সাধারণ মানুষ, সিনিয়র ডাক্তারেরা। অভিযোগ, ধর্মতলায় অনশনকারীদের মঞ্চের অদূরে বাধা দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বচসায় জড়াতেও দেখা গিয়েছে। ধর্মতলার অনশন মঞ্চের কাছেই পুলিশ বার বার মাইকিং করে বলতে থাকে, উৎসবের মরসুমে স্লোগান দিয়ে মিছিল করা যাবে না। অভিযোগ, মিছিল আটকাতে রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে রাখে পুলিশ। যদিও গার্ড রেল সরিয়ে আন্দোলনকারীদের এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে মিছিল করলে পুজোর সময় সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে। তাই গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানো হয়েছে। পুলিশের তরফে মাইকিং করেও বার বার সে কথা বলা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের দেওয়া গার্ডরেল সরিয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, এর পর চাঁদনি চক এবং গণেশচন্দ্র এভিনিউতে আবার মিছিল আটকায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একাংশকে ধস্তাধস্তি করতেও দেখা যায়। শেষে কলেজ স্কোয়্যারের সামনে এসে পৌঁছলে সেখানে আর একপ্রস্থ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। অভিযোগ, মণ্ডপে যাওয়ার মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। এর পরেই শুরু হয় বচসা। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করছিলেন। তার পরেও বাধা দিয়েছে পুলিশ। যদিও পুলিশ জানিয়ে দেয়, উৎসবের সময় এত জন মিলে মণ্ডপে প্রবেশ করা যাবে না। সেই নিয়ে নতুন করে বাদানুবাদ শুরু হয়। শেষে মণ্ডপের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন পুজো উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘‘উৎসবে কোনও দর্শনার্থীর অসুবিধা হোক, চাই না। শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে মানুষ ঠাকুর দেখতে পারেন, সেটাই চাই।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করা হয়নি বলেই মণ্ডপে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন পুজো কমিটি। অন্য দিকে, প্রতিবাদীদের পাশে দাঁড়ালেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয তিনি অভিযোগ করলেন, প্রতিবাদীদের বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তিনি সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের সব আলো নিভিয়ে প্রদীপের আলো জ্বালিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, সজল ওই পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা।
বুধবারও দফায় দফায় ‘অভয়া পরিক্রমা’ বার বার বাধার মুখে পড়েছে। ত্রিধারা সম্মিলনী থেকে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ন’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হয়েছে। আট দিনের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচিতে যদিও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি পুলিশ।