অভীক মুখোপাধ্যায়
চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে, বারুইপুরের বেগমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ একটি মোটরবাইকে নিজের বান্ধবীকে নিয়ে বেগমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুশো কলোনি এলাকায় গিয়েছিলেন অভীক মুখোপাধ্যায় নামে ওই যুবক। অন্ধকারে তাঁদের দেখে চোর বলে সন্দেহ করেন গ্রামবাসীরা। সেই সন্দেহেই ওই যুবককে গ্রামবাসীরা পিটিয়ে খুন করেছেন বলে পুলিশের দাবি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মারের চোটে ঘটনাস্থলেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন অভীক।
এ দিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। অভীককে উদ্ধার করে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, অভীক কলকাতার নেতাজিনগর থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। পেশায় প্রোমোটার ওই যুবকের বছরকয়েক আগে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছিল।
সূত্রের খবর, বারুইপুরের ওই এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে পর পর চুরি হচ্ছিল। তাই গভীর রাতে অচেনা ব্যক্তিকে এলাকায় ঘুরতে দেখে চোর সন্দেহ করে গ্রামবাসীরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে তাদের গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার লোকজন।
পরে গ্রামবাসীরাই এক তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে নিয়ে যান। তাঁদের দাবি, ওই তরুণী এলাকারই একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। সেই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনিও নেতাজিনগরের বাসিন্দা। অভীকের সঙ্গে তাঁর মোটরবাইকে চেপে বেগমপুরে এসেছিলেন। অত রাতে নেতাজিনগর থেকে বেগমপুরে যাওয়ার কারণ নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশায় রয়েছেন তদন্তকারীরা। তরুণীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তরুণীর মায়ের দাবি, তাঁর মেয়ে রেস্তরাঁয় গান করেন। মেয়ের মানসিক সমস্যাও রয়েছে। মাস ছয়েক একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। ঘটনার রাতে ‘একটু বাইরে যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। মেয়ে কার সঙ্গে বেরিয়েছিলেন, তা তিনি জানেন না বলেই দাবি তরুণীর মায়ের।
অভীকের দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, সারা দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মৃতের পরিজন ও বন্ধুদের দাবি, পরিকল্পনা করেই অভীককে খুন করা হয়েছে। অভীকের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেন, ‘‘নেতাজিনগর এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রোমোটিং শুরু করেছিল অভীক। বারুইপুরে জমি কেনার পরিকল্পনাও ছিল। আক্রোশের বশে ওকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।’’
গণপিটুনির ঘটনার পর থেকেই ওই কলোনির অধিকাংশ পুরুষ পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। মহিলাদের জেরা করা হচ্ছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে গণপিটুনির ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তল্লাশি অভিযানও চলছে।’’