শপিং মলের ভিতর ছড়িয়ে গিয়েছে কালো ধোঁয়া। —ফাইল চিত্র।
সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম!
শপিং মলের ভিতরে তখন শুধুই কালো ধোঁয়া। উপরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এত ধোঁয়া যে, দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল, আর হয়তো এখান থেকে বেরোতে পারব না।
আমার স্টোর একতলায়। প্রতি দিনের মতো শুক্রবারও ঠিক সময়ে স্টোরে ঢুকেছিলাম। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ, (শপিং মলে লোকজন কেনাকাটার জন্য সবে ঢুকতে শুরু করেছেন) হঠাৎ পাশের স্টোর থেকে এক জন বললেন, মলের ভিতরে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। দিন কয়েক আগে এক বার শপিং মলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে কাজ হয়েছিল। তাই প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছিলাম, হয়তো আগের দিনের মতো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে। ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ বেজে উঠতেই হুঁশ ফেরে। স্টোর থেকে বেরোতেই দেখি, চারতলার এক দিক দাউ দাউ করে জ্বলছে। শপিং মলের কয়েক জন কর্মী যন্ত্র নিয়ে আগুন নেভানোর
চেষ্টা করছেন।
আর এক মুহূর্তও দেরি করিনি। দৌড়ে স্টোরে ঢুকে সহকর্মীদের খবর দিয়ে নীচে নামার জন্য বেরিয়ে আসি। আমার মতো অনেকেই তখন প্রাণ বাঁচাতে, কে কোন দিক থেকে তাড়াতাড়ি বেরোতে পারবেন, সেই পথ খুঁজছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কালো ধোঁয়ায় গোটা শপিং মল ভরে গেল। তার মধ্যেই কম বয়সি, বয়স্ক— সকলেই ছুটছেন, কেউ আবার চিৎকার করে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলছেন। কালো ধোঁয়া এত দ্রুত বাড়ছিল যে, কিছুই সে ভাবে দেখা যাচ্ছিল না।
চার দিকে শুধু চিৎকার আর কান্না। নীচে নামার জন্য এসক্যালেটরের সামনে অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। পরস্পরকে টপকে নীচে নামার চেষ্টা করছিলেন, প্রাণ বাঁচাতে। আমি কোনও মতে এসক্যালেটরে দাঁড়িয়ে পড়ি। নীচে নামার জন্য হয়তো কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল! তখন মনে হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টা। ভয় করছিল, এই বুঝি আটকে গেলাম। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের শপিং মলে আগুন লাগার ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল। নীচে নেমে দৌড়। বেরিয়ে আসতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
এখন শুধু ভাবছি, বিকেল বা সন্ধ্যায় আগুন লাগলে যে কী হত!