উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার, বাগুইআটিতে। ছবি:নিজস্ব চিত্র
দোল, হোলি আর গুড-ফ্রাইডে উপলক্ষে টানা কয়েক দিনের ছুটি। তাই ছ’দিনের জন্য দল বেঁধে সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন বাগুইআটি এলাকার সাহাপাড়ার পাঁচটি পরিবারের ১৫ জন। কিন্তু মাঝপথেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হল ছুটির আনন্দ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শঙ্করপুর থেকে পুরী যাওয়ার সময়ে কটকে ওই দলের একটি গাড়ি উল্টে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। তাঁদের এক জন জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার প্রলয় সাহা। আহত আরও দুই।
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাহাপাড়ার ওই ১৫ জন বাসিন্দা প্রথমে গিয়েছিলেন শঙ্করপুরে। সেখানেই দোল কাটিয়ে এ দিন দুপুরে পাঁচ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন প্রায় ৩৬০ কিমি দূরের পুরীর উদ্দেশে। বেড়াতে যাওয়া ওই দলেরই এক জন লালন চক্রবর্তী জানান, তাঁদের গাড়িটি প্রথমে যাচ্ছিল। পিছনে আসছিল অন্য গাড়িটি। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওড়িশায় ঢুকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি পিছনের গাড়িটি নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম ওঁরা হয়তো পিছিয়ে পড়েছেন। অনেক ক্ষণ দেখতে না পেয়ে ওঁদের ফোন করি। কিন্তু কেউ-ই ফোন ধরেননি।’’ এর পরেই রাস্তার এক ধারে গাড়ি দাঁড় করান লালনবাবুরা। সেই সময়েই পুলিশ ফোন করে তাঁদের জানায়, কটকের ধর্মশালা থানার জাজপুরের কাছে খাদে পড়ে গিয়েছে তাঁদের সঙ্গীদের গাড়িটি। প্রলয়বাবুর এক আত্মীয় জানান, ওই গাড়িটি সম্ভবত প্রলয়বাবুই চালাচ্ছিলেন।
লালনবাবু জানান, খবর পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে জাজপুর গিয়ে তাঁরা দেখেন, রাস্তার পাশের খাদে পড়ে রয়েছে গাড়িটি। গাড়ির যাত্রীরা রক্তাক্ত অবস্থায় এদিক-ওদিকে পড়ে রয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে ওড়িশা পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জেনেছে, কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় ওই গাড়িটির। এর পরেই সেটি উল্টে গড়াতে গড়াতে গিয়ে পড়ে জাতীয় সড়কের পাশের খাদে।
পুলিশ ওই গাড়ির সকলকেই কটক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ছ’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। প্রলয়বাবু ছাড়া বাকি পাঁচ জন মৃতের নাম সমীর দত্ত, অমিত চৌধুরী, শুভ্রা চৌধুরী, এমিলি দাস ও সৃজা দাস। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কটক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সজল দাস ও জিয়া সাহা। অমিতবাবু এবং শুভ্রাদেবী স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের ছেলে অভীক অন্য গাড়িতে ছিল। সজলবাবু এমিলিদেবীর স্বামী। সৃজা তাঁদের মেয়ে। প্রলয়বাবুর মেয়ে জিয়া। জিয়ার মা রূপাদেবী ছিলেন সামনের গাড়িতে।
এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোটা পাড়ায় শোকের ছায়া। দুর্ঘটনায় পড়া পরিবারগুলির আত্মীয়-বন্ধুদের একটি দল গাড়ি নিয়ে বিকেলেই রওনা হয় কটকের উদ্দেশে। সন্ধ্যার বিমানে আরও একটি দল গিয়েছে সেখানে। দোলের ছুটি কাটিয়ে রবিবার যাঁদের বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল, আচমকা তাঁদের মৃত্যুর খবরে খানিক যেন হতবাক সাহাপাড়ার ধানমাঠ এলাকা। এলাকাবাসীরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না, মঙ্গলবার বিকেলে দু’টি গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরোনো পড়শিদের এই পরিণতি। স্থানীয় বাসিন্দা বাপন সাহা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালেও ওঁদের কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হল। কত কথা হল। আর আজ বিকেলে এই খবর শুনে বিশ্বাসই করতে পারছি না।’’
কাছেই দমদম পার্কে থাকেন প্রলয়বাবুর মা রেণুকাদেবী। দেড় মাস আগেই প্রলয়বাবুর বড় দাদার মৃত্যু হয়েছে। এ দিন ছোট ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন রেণুকাদেবী। প্রলয়বাবুর ভাইপো রাজীব বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতেও কাকিমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। ওঁরা বললেন, শঙ্করপুর হয়ে পুরী যাবেন। তার মধ্যেই এই খবর। বিশ্বাসই হচ্ছে না।’’
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ওড়িশার মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দু’রাজ্যের পুলিশের মধ্যেও কথা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।