প্রচারে: পোস্টার হাতে হাজরায় ওই নাট্যকর্মীরা। ছবি: সুমন বল্লভ।
ঠা ঠা রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একদল তরুণ-তরুণী। হাতে প্লাস্টিক বিরোধী পোস্টার। কখনও নর্দমায় আটকে থাকা প্লাস্টিক তুলছেন তাঁরা। কখনও আশপাশের দোকানে ঢুকে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে সচেতন করছেন। সঙ্গে মাইকে প্রচার ও সই সংগ্রহ অভিযান। ৫০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এ ভাবেই পথে নেমেছে শহরের একটি নাট্যগোষ্ঠী।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে যত আবর্জনা তৈরি হয়, তার ৮-১০ শতাংশই প্লাস্টিক। বছরে প্রায় ৮ কোটি টন প্লাস্টিক মিশছে সমুদ্র ও নদীতে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক পচনশীল নয়। তবে ৫০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের সুযোগ সে ভাবে না থাকায় ক্রমেই তা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তাই গত বছর ওই মাপের প্লাস্টিক বর্জনের ডাক দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জ। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার জানান, প্লাস্টিক বন্ধে বহু বার অভিযান ও প্রচার চালানো হয়েছে। কিছু বাজারে প্লাস্টিক বন্ধের চেষ্টা করা হয়েছে। স্কুল-কলেজেও সরকারি ও বেসরকারি তরফে চলেছে প্রচার। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন এই নাট্যগোষ্ঠী।
চার-পাঁচ বছর আগে আত্মপ্রকাশ করা ওই দলের নতুন নাটকে মূল বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে প্লাস্টিক-সমস্যা। এ ছাড়াও রয়েছে জলের অপচয়, কন্যাভ্রূণ হত্যা, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদী, সংবিধানের অপব্যাখ্যা-সহ বেশ কিছু সামাজিক ও নাগরিক সমস্যার কথা। তবে ওই সমস্যার কথা বলতে শুধু মঞ্চ নয়, শহরের রাজপথকেও বেছে নিয়েছেন দলের কর্মীরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পথে প্রচার কেন? নিছক ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’? দলের সভাপতি বিদেশ হাজরার সাফ জবাব, ‘‘সমস্যাগুলো নিয়ে শুধু মঞ্চে থিয়েটার করলে তা বিনোদনের অংশ হয়েই রয়ে যেত। আর পাবলিসিটি চাইলে পথনাটিকা করতাম, বাড়ি বাড়ি ঘুরে সই সংগ্রহ করতাম না। মানুষকে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ।’’ তাঁদের লক্ষ্য, আগামী এক বছর ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালাবেন। সই সংগ্রহ করে জমা দেবেন মেয়র এবং পুরমন্ত্রী-পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কাছে, প্লাস্টিক-বিরোধী কড়া আইন তৈরির দাবি জানিয়ে।
১৯ এপ্রিল প্রথম যাদবপুর এলাকায় প্রচারে নেমেছিলেন দলের ত্রিপর্ণা-নীলাক্ষি-সোনিয়া-মনীষা-চন্দ্রকান্ত-উদয়নেরা। তাঁদের কেউ কলেজপড়ুয়া, কেউ সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। প্রথম দিনেই প্রায় একশো সই এসেছে তাঁদের ঝুলিতে। পরে হাজরা মোড়, বাঘা যতীন এলাকাতেও প্রচার চালিয়েছেন তাঁরা। অভিজ্ঞতা কেমন? দলের সেক্রেটারি উদয়ন রায় জানাচ্ছেন, অনেকেই স্বেচ্ছায় শামিল হয়েছেন। কটাক্ষও কম শুনতে হয়নি। কেউ বলেছেন, ‘‘এ সব করে কী হবে? এখানে এসেছেন কেন?’’ কারও আবার মন্তব্য, ‘‘থিয়েটার করে হবে কী? বাড়ি গিয়ে করে-কম্মে খান।’’
কেমন লাগে তখন? কোচবিহারের ছেলে, বছর বাইশের উদয়নের উত্তর, ‘‘এ সবের জন্য প্রস্তুত হয়েই নেমেছি। গায়ে লাগে না।’’