গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
সংসদে রং-বাজিকে একটুও কম গুরুত্ব নয়, বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ‘নির্দেশ’ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে তদন্তকারী দিল্লি পুলিশ। সংসদহানার উৎস খুঁজতে আগেই ‘মূলচক্রী’ ললিত ঝার কলকাতার আস্তানায় পৌঁছেছিল তারা। মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লি পুলিশের একটি দল এল মধ্য কলকাতার সরকারি দফতরগুলির খাস চত্বর ডালহৌসির অফিসপাড়ায়।
সোমবার থেকেই দিল্লি সংসদ হানার তদন্তে কলকাতার অলিতে-গলিতে ঘুরছে দিল্লি পুলিশ। সংসদহানার মূলচক্রী ললিতের আস্তানার খোঁজে তদন্তকারীরা পৌঁছেছিলেন রবীন্দ্র সরণিতে, ললিতের টিউশন পড়ানোর ঠিকানায়। এর পরে মঙ্গলবার সকালে দিল্লি পুলিশের একটি দল এসে হাজির হয় ইকো পার্ক থানায়। বিকেলে এই দলটিই আসে ডালহৌসি চত্বরে। তবে অফিসপাড়ায় ললিতের কোনও ঘাঁটিতে নয়। তদন্তকারীরা সেখানে এসেছিলেন ললিতের একটি সিম কার্ডের খোঁজে। বিএসএনএল অফিসে।
সূত্রের খবর, সংসদহানার নেপথ্য নায়ক ললিত, যিনি বাংলায় একটি এনজিওরও কর্মী, তিনি বিএসএনএলের সিম কার্ড ব্যবহার করতেন। দিল্লি পুলিশ ডালহৌসির বিএসএনএল অফিসে গিয়েছিল ললিতের নম্বরের একটি ডুপ্লিকেট সিম কার্ড বার করতে।
গত বুধবারের সংসদহানার ঘটনার পরে যখন ললিতকে হন্যে হয়ে খুঁজছে দিল্লি পুলিশ, তখন জানা যায়, শেষ বার রাজস্থানে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেখানেই রেকর্ড হয়েছিল তাঁর ফোনের শেষ লোকেশন। এর পর দিল্লিতে এসে দিল্লি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ললিত। মঙ্গলবার সংসদহানার ছ’দিন পর ললিতের সিমকার্ডে খোঁজে আপাতত কলকাতায় দিল্লি পুলিশ।
জানা গিয়েছে, বিএসএনএল দফতরে দিল্লি পুলিশ জানতে চেয়েছে, ওই সিম কোন কোন ফোনে ব্যবহার হয়েছিল, কোথায় কোথায় ওয়াইফাই-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এ ছাড়াও আরও কিছু প্রযুক্তিগত বিষয়ে তথ্য চেয়েছে দিল্লি পুলিশ।
তবে শুধু ডালহৌসি নয়, মঙ্গলবার কলকাতায় ললিতের বাগুইআটির ভাড়াবাড়িতেও এসেছিল দিল্লি পুলিশের দলটি। কলকাতার বাগুইআটিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন ললিত। মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ গিয়েছিল ললিতের সেই ভাড়াবাড়িতেই। তবে যে হেতু এলাকাটি ইকো পার্ক থানার অধীনে, তাই সেখানে যাওয়ার আগে স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। তার পর যান বাগুইআটিতে ললিতের ঠিকানায়।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বাগুইআটিতে ললিতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তাঁরা দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংসদের ঘটনার দিন তিনেক আগেও এই ঘরে থেকেছেন ললিত। গত ১০ ডিসেম্বরও তাঁকে এই বাড়িতে দেখেছেন তাঁরা। ১০ তারিখ অর্থাৎ সংসদে ‘রং-বাজি’র ঘটনার তিন দিন আগে ঘর বন্ধ করে চলে যান ললিত। তবে তাতে কারও কিছু মনে হয়নি। কারণ, অনেকেই ভেবেছিলেন ললিত হয়তো তাঁর দেশের বাড়ি গিয়েছেন। মঙ্গলবার বাগুইআটিতে এসে ললিতের বাড়ির মালিকের সঙ্গেও কথা বলেছে দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী দল।
মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের ওই দলটি অবশ্য ললিতের বাগুইআটির আস্তানায় তালা খোলেনি। এর আগে সোমবারও তাঁরা তালা ঝুলতে দেখেছিলেন ললিতের টিউশনি পড়ানোর ঠিকানা ২১৮ রবীন্দ্র সরণিতে। সেখানেও একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলেন ললিত। তবে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ললিতের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তাঁরা দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বহু দিন ধরেই এই এলাকায় আসেননি ললিত। ওই ঘর তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। দুপুরেই বাগুইআটি থেকে বেরিয়ে আসে দলটি। এর পর বিকেলে তারা পৌঁছয় মধ্য কলকাতার ডালহৌসি চত্বরে বিএসএনএলের অফিসে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সংসদে রংবোমা হানা এবং স্লোগান দেওয়ার ঘটনার নেপথ্যে মূল মাথা ললিতেরই বলে মনে করছে দিল্লি পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ললিত নিজেই এসে ধরা দেন পুলিশের কাছে।