প্রতীকী ছবি।
হাত চিরে লেখা, ‘এফ-৩২’! দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার ফেসবুকে আপলোড করা এই ছবি দেখেই আঁতকে উঠেছিল বন্ধুরা। তারাই জানায় ওই কিশোরের পরিবারকে। সেখান থেকে খবর যায় সার্ভে পার্ক থানায়।
ছেলে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার খপ্পরে পড়েছে ভেবে দিশেহারা পরিবার। পুলিশও বিপদ আঁচ করে আর দেরি করেনি। কিশোরকে থানায় এনে শুরু হয় কাউন্সেলিং। কথা যত এগোতে থাকে, ততই খুলতে থাকে ‘নীল তিমি’ রহস্যের জট। কথায় কথায় ছেলেটি বলেই ফেলে, ‘‘গেম নয়, প্রেম’’।
পুলিশ জানায়, বান্ধবীর সঙ্গে মন কষাকষি হয়েছিল ওই কিশোরের। কিছুতেই মিটছিল না ভুল বোঝাবুঝি। শেষমেশ তাই ‘নীল তিমি’-র শরণ নেয় সে। শুনেছে, ‘ব্লু হোয়েল’ খেলায় নাকি হাত কেটে এ সব লিখতে হয়। সে তাই ব্লেড দিয়ে হাত চিরে লিখেছিল ‘এফ-৩২’। ফেসবুকেও দিয়েছিল। যাতে বান্ধবী ভয় পেয়ে ফিরে আসে।
এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল। গত মাসে গড়বেতায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র হাত চিরে ‘এফ-৫৭’ লিখে রেখেছিল। কিন্তু পুলিশি প্রশ্নের মুখে ওই ছাত্র ভেঙে পড়ে জানায়, চমক দেখাতেই বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছিল সে।
এই ধরনের ঘটনাগুলি এক ধরনের অবসাদ থেকেই ঘটছে বলে জানান মনোবিদেরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের শিক্ষক অনিন্দিতা চৌধুরীর মতে, বান্ধবীর নজর কাড়তেই হাত চিরে লেখার কাণ্ড ঘটিয়েছে ওই ছাত্র। এর থেকে বোঝা যায়, নজর কা়ড়ার তীব্র ইচ্ছে ওই কিশোরদের মধ্যে কাজ করেছে। হয়তো আগেও এমন ভাবে নিজের শারীরিক ক্ষতি করে সে লোকজনের নজর কা়ড়ার চেষ্টা করেছে। অনিন্দিতাদেবীর মতে, ‘‘অনেকেই এমন মানসিকতার শিকার হন। কিন্তু তা পরিবার বুঝতে পারে না। ওই ছাত্রের আগেই কাউন্সেলিং প্রয়োজন ছিল।’’
পুলিশ অবশ্য এই কিশোরের কাণ্ড দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছে! এক পুলিশ অফিসার তো বলেই ফেললেন, ‘‘এইটুকু ছেলের পেটে পেটে এমন দুর্বুদ্ধি!’’ অন্য জনের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আহা, প্রেমে পড়লে কি আর মাথার ঠিক থাকে?’’ বান্ধবীর প্রতি অনুরাগবশত এমন কাণ্ড ঘটালেও পুলিশ কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখেছে। তাই ‘নীল তিমি’র বিপদ নিয়ে তাকে যেমন বোঝানো হচ্ছে, তেমনই ঘেঁটে দেখা হচ্ছে তার মোবাইল ফোন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রোফাইলও।
কে বলতে পারে, প্রেমের ছদ্মবেশে যদি সত্যিই লুকিয়ে থাকে ‘নীল তিমি’!