Rape victim

Rape Victim: ইন্টারপ্রিটারের অভাবেই কি এ বারও ঘুরতে হল দুই থানা

প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাতে, গত মঙ্গলবার কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে ওই তরুণীকে জোর করে নিজের এসি ট্যাক্সিতে তোলে অভিযুক্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রথমে আনন্দপুর, সেখান থেকে তিলজলা থানা। দিনভর ঘুরেও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি মূক ও বধির তরুণী। অভিযোগ, ওই দুই থানায় মেলেনি কোনও ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য। অবশেষে প্রগতি ময়দান থানায় গিয়ে রাত ১১টা নাগাদ অভিযোগ জানাতে পারেন তরুণী। পরের দিন সকালে ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য মেলে। সম্প্রতি প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় এক মূক ও বধির তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে এই তথ্যই সামনে এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাতে, গত মঙ্গলবার কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে ওই তরুণীকে জোর করে নিজের এসি ট্যাক্সিতে তোলে অভিযুক্ত। এর পরে ই এম বাইপাসের কাছেই একটি
অন্ধকার জায়গায় গাড়ির মধ্যে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে রাস্তায় ফেলে গাড়িচালক চলে যায় বলেও অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, রাস্তা চিনতে না পারায় ওই রাতে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তরুণীর। পরের দিন কোনও মতে ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরেন তিনি।

পরের দিন, প্রজাতন্ত্র দিবসে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে তাঁকে দিনভর ছুটে বেড়াতে হয় বলে অভিযোগ। তরুণী জানিয়েছেন, এক পরিচিতকে নিয়ে প্রথমে তিনি আনন্দপুর থানায় যান। কিন্তু
বক্তব্য বোঝা যাচ্ছে না বলে সেখান থেকে তাঁকে তিলজলা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিলজলা থানাতেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। তবে তিলজলা থানা শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থল প্রগতি ময়দান থানার অন্তর্গত বুঝে তরুণীকে সেখানে পাঠায়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারওরই অভিযোগ জানানোর জন্য এক থানা থেকে আর এক থানায় ঘুরে বেড়ানোর কথা নয়। নিয়ম হল, থানা অভিযোগ শুনে নিয়ে মামলা রুজু করে যথাস্থানে পাঠিয়ে দেবে। একে জ়িরো এফআইআর বলে।’’ আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘শুধু অভিযোগ দায়ের কেন, এই সমস্ত ঘটনার ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা থেকে তদন্তের বাকি প্রক্রিয়াও দ্রুত করা দরকার।’’

Advertisement

ওই তরুণীর প্রথম থেকেই ইন্টারপ্রিটার না পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত জুলাই মাসে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে এন্টালি থানায় গিয়েছিলেন আর এক মূক ও বধির তরুণী। পুলিশ একটি নিগ্রহের অভিযোগ লিখে নেয়। কোনও ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য তিনি পাননি। সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় লেগে যায় আদালতে ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। যে গুরুতর অভিযোগ
ইন্টারপ্রিটারের উপস্থিতিতে প্রথমেই পুলিশের জেনে নেওয়ার কথা, তা আদালত ঘুরে কেন জানতে হবে, সেই প্রশ্ন ওঠে।

প্রগতি ময়দান থানা এলাকার এই ঘটনায় তরুণীকে সাহায্য করা ইন্টারপ্রিটার রজনী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে তরুণীর প্রথমেই সাহায্য পাওয়া উচিত ছিল। প্রগতি ময়দান থানায় তিনি আসতেই রাত ১১টা নাগাদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরের দিন ভোর সাড়ে ৬টায় আমি থানায় গিয়ে তরুণীর সঙ্গে কথা বলি। দেরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ খুব সক্রিয় ছিল। এন্টালির ঘটনার আগে এই সচেতনতার সামান্যতমও দেখা যেত না।’’ রজনী বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে মূক ও বধির কারও ডায়েরিই নেওয়া হয় না। বুঝতে না পেরে পুলিশ বলে দেয়, হয় হাতে লিখে দিন, না হলে বুঝিয়ে দেবে এমন কাউকে নিয়ে আসুন। বহু ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া হয়, পরে দেখছি। কিন্তু মাসের পর মাস গড়িয়ে যায়, থানা থেকে ডাক আসে না।’’

এই ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে কাজ করেন, এমন অনেকেই জানাচ্ছেন, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা থেকে গোপন জবানবন্দি, টিআই প্যারেড থেকে মামলার প্রতিটি শুনানির দিনই এক জন ইন্টারপ্রিটারকে রাখতে হয়। এর জন্য যে টাকার প্রয়োজন, বহু ক্ষেত্রে তা খরচ করতে চাওয়া হয় না। স্পেশ্যাল এডুকেটর স্বাতী বসু বলেন, ‘‘অপরাধের শিকার হলে যে কোনও মানুষই গুটিয়ে যান। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি হয়। এই ধরনের ঘটনা যাতে আরও ভাল ভাবে সামলানো যায়, তার জন্য থানাভিত্তিক নোডাল অফিসার বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। তবে এন্টালির ঘটনার পরে কিছুটা হলেও যে সচেতনতা এসেছে, তা বোঝা যাচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement