নতুন: বাজারে এসেছে এই মোদী-পুতুল। নিজস্ব চিত্র
নেই গাড়ির কনভয়। নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নেই। অথচ মাথায় জরির ওড়নার পাগড়ি, গায়ে সাদা কুর্তা-পাজামার উপরে ধূসর জহর কোট এবং পায়ে কালো জুতো পরে তিনি হাজির সবার সামনে। গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ঝুলিয়ে সাদা দাড়ি-গোঁফের ফাঁক দিয়ে মুচকি হেসে যেন বার্তা দিচ্ছেন, ‘আমিও মোদী। সত্যের সঙ্গে, সকলের উন্নয়নে, সকলের বিশ্বাসের সঙ্গে।’ শপিং মলে এসেছেন নমো। খেলনার দোকানে, পুতুল হয়ে হাজির স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শহরের দক্ষিণের এক শপিং মলে সেই পুতুল দেখে ক্রেতারা বিস্ময় প্রকাশ করে মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘মোদীর পুতুল! দিদি দেখলে তো রেগে যাবেন!’’ শপিং মলের দোকানে দিন পাঁচেক আগে যখন বাক্সের মোড়ক খোলা হয়, তখন মোদীকে বেরোতে দেখে চমকে উঠেছিলেন কর্মীরাও। একে অপরকে ডেকে দেখিয়ে হাসিহাসি করেছিলেন নিজেদের মধ্যেই। ওই দোকানের কর্মীরাই জানাচ্ছেন, মাত্র দু’টি মোদী পুতুল এসেছে। তবে এটিই প্রথমবার। বাচ্চাদের অন্য খেলনা পুতুলের মাঝেই প্লাস্টিকের বাক্সের মধ্যে স্ট্যান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মোদীজি। দাম দেড় হাজারের উপরে।
দোকানেরই এক কর্মীর কথায়, ‘‘দু’টির কোনওটাই এখনও বিক্রি হয়নি। তবে ক্রেতারা সকলেই দেখছেন, অবাক হচ্ছেন। আগে কখনও কোনও নেতার মতো দেখতে পুতুল আসেনি।’’ তবে ওই শপিং মলেই থাকা অন্য খেলনার দোকানে অবশ্য ‘নমো’ নেই। সেখানকার কর্মীর সহাস্য উত্তর ‘বাচ্চাদের খেলার তো অনেক পুতুল আছে। অযথা ঝামেলা বাড়িয়ে কী লাভ!’’
‘দিদির রাজ্য’-এর শপিং মলে এই প্রথম তিনি পা রাখলেও তাঁর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনেক আগেই ঢুকে পড়েছেন নমো। বিভিন্ন অনলাইন বিপণন সংস্থায় বিক্রি হচ্ছে ১৫ ইঞ্চির মোদী সফট-টয়েজ। সেখানে তিনি সাদা কুর্তা-পাজামার উপরে কমলা জ্যাকেট পরা, চোখে চশমা। এক একটি সংস্থায় ছাড় দিয়ে দাম ৯০০ থেকে ১২০০-র মধ্যে।
তবে অনলাইন ওই বিপণন সংস্থাগুলি সরাসরি মোদীর নাম করলেও গুগুলে গিয়ে ‘মোদী ডল’ সার্চ করলেই বিভিন্ন অনলাইন বিপণন সংস্থার সাইটে রীতিমতো দাম, বৈশিষ্ট্য-সহ ফুটে উঠছে প্রধানমন্ত্রীর মতো হুবহু দেখতে নরম পুতুলের ছবি। নমোর পুতুল সম্পর্কে অনলাইন বিপণন সংস্থার একাংশের বর্ণনায় এ-ও বলা হয়েছে, ‘ওঁকে পছন্দ করুন বা না-ই করুন, এই সফট টয় আপনাকে নিতেই হবে। উনি টিভি, রেডিয়ো, সংবাদপত্রে তো আছেনই। এ বার নিয়ে যান আপনার বাড়িতেও। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিন। পাশে বসিয়ে সেলফিও তুলুন’।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের দাবি, নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তাতে তাঁকে অনুকরণ করাটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘‘যাঁকে মানুষ পছন্দ করবেন, তাঁকেই তো অনুকরণ করবেন। স্বাভাবিক ভাবে সেটা বাজারে আসবে। তাঁর নামেই প্রচার, ব্যবসা সব চলবে। বাচ্চারাও এখন ওঁকে চিনে গিয়েছে। মানুষের এই আগ্রহকেই ব্যবসায়ীরাও কাজে লাগাচ্ছেন। সব দিক দিয়ে মোদীর নাম কাজে লাগছে।’’
পুরো বিষয়টি শুনে শাসকদলের মন্ত্রী-নেতাদের একাংশের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ নিয়ে আবার বলার কী আছে!’’