জোড়াতালি: বাঁশের খুঁটির উপরে ঘর বেঁধে বসবাস। বিধাননগরের মালিবাগানে। স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
পাকা রাস্তা থেকে বাড়ি পৌঁছতে হলে যেতে হয় বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে। আইনি মালিকানা পাওয়া জমি। বৈধ ভোটারও বটে। তা সত্ত্বেও জলের উপরে ছোট ছোট টিনের বাড়ি তৈরি করেই যুগের পর যুগ কাটছে ওঁদের। শীত হোক, গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা— এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াত করতে হলেও ভরসা সেই বাঁশের সাঁকো। প্রতি বারই ভোটের আগে ওঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, জলাজমি নাকি উঁচু করা হবে। বাড়ির সামনে পাকা রাস্তা হবে। তার পরে অবশ্য সবই গতানুগতিক ভাবেই চলে।
বিধাননগর পুরসভার ১৪, ২০ কিংবা ২১ নম্বর ওয়ার্ডে একটু ঘুরলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। ওই সমস্ত ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লি, মালিবাগান, স্বামীজিনগর, প্রমোদগড় কিংবা জ্যোতিনগরের মতো বহু এলাকায় বাসিন্দারা এখনও বসবাস করেন নিচু জলাজমির উপরে বাঁশের মাচায় বাড়ি তৈরি করে। এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, তিন দশক আগে কেষ্টপুর খাল সংস্কারের সময়ে খালপাড় জুড়ে বসে থাকা জবরদখলকারীদের বামফ্রন্ট সরকার অরবিন্দপল্লি, মালিবাগান, স্বামীজিনগরের মতো বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট জমি দিয়ে পুনর্বাসন দিয়েছিল। প্রায় সবই নিচু ও জলাজমি।
সম্প্রতি এক বিকেলে ওই সমস্ত এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও জমে রয়েছে জল। আশপাশের উঁচু এলাকাগুলি থেকে আসছে ওই জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শীতকালে মশা এবং বর্ষায় সাপ-ব্যাঙের উপদ্রব বাড়ে। দেখা গেল, জলের উপরেই তৈরি হয়েছে ছোট ছোট বাড়ি। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতের ভরসা সেই সাঁকোই। বাসিন্দারা জানালেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়েই কোলে-কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলতে হয়।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বিধাননগরে পুরভোট। স্বভাবতই তার আগে প্রার্থীরা ওই সমস্ত এলাকায় প্রচারে গিয়ে মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী প্রসেনজিৎ নাগের কথায়, ‘‘আমি তো প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েছি। যদি জিতি, তা হলে এই সব অনুন্নত এলাকার উন্নয়ন করতে অবশ্যই চেষ্টা করব। আমার প্রশ্ন, বামফ্রন্ট এখানে কয়েক জমানা রাজত্ব করেছে। জ্যোতি বসুর নামে জ্যোতিনগর, প্রমোদ দাশগুপ্তের নামে প্রমোদগড় তৈরি করেছে। কিন্তু মানুষের দুর্দশা কেন দূর করতে পারেনি?’’ ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মনোরঞ্জন ঘোষের দাবি, ‘‘আগে এমন নিচু এলাকার সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এখনও কিছু অঞ্চল রয়ে গিয়েছে। ১৯৮৬ সালে খাল সংস্কারের সময়ে খালপাড়ের বাসিন্দাদের বামফ্রন্ট সরকার ওই সব ধানজমিতে বসবাস করতে দিল। কিন্তু তার পরে তেমন ভাবে আর তাঁদের জন্য কখনও কিছু করেনি।’’
কিন্তু বিধাননগর পুরসভা কী করল?
একদা রাজারহাট-গোপালপুরের সিপিএম চেয়ারম্যান ও বিধাননগরে তৃণমূলের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের বর্তমান বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সারা দেশেই এই সমস্যা রয়েছে। তা-ও ওই সব এলাকার অবস্থা আগের তুলনায় এখন অনেক ভাল। বর্তমানে সরকারি প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকাগুলির উন্নয়নের পরিকল্পনা চলছে।’’