মর্মান্তিক: দুর্ঘটনাস্থলে তখনও পড়ে রয়েছে ছাত্রীর জুতো। রবিবার, ভিআইপি রোডের কৈখালিতে। —নিজস্ব চিত্র।
দিনকয়েক আগেই স্কুটার দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পেয়েছিলেন। তার পরেও মেয়েকে নিয়ে ফের রবিবার দুপুরে পরীক্ষা দেওয়াতে গিয়েছিলেন মা। বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ডাম্পারের ধাক্কায় স্কুটার নিয়ে ছিটকে পড়েন মা ও মেয়ে। মায়ের পায়ে আঘাত লাগলেও ডাম্পারের চাকার তলায় পিষে গিয়ে মৃত্যু হল কিশোরী মেয়ের।
রবিবার দুপুরে বিধাননগর কমিশনারেটের কৈখালি এলাকায় ভিআইপি রোডে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম হিয়া রায় (১২)। দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ডাম্পারটিতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও ডাম্পারের চালক পালিয়ে যান। ডাম্পারটি আটক করেছে পুলিশ। আকস্মিক ঘটনায় স্তম্ভিত মা ও মেয়ের প্রতিবেশীরাও। বেলঘরিয়ার নিমতার আলিপুর মোড় এলাকার বসিন্দা তাঁরা। সেখানে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে মেয়ে হিয়াকে নিয়ে একাই থাকতেন মহিলা।
পুলিশ জানায়, দুপুর ৩টে ২৫ মিনিট নাগাদ কৈখালির মোড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। মেয়েকে স্কুটারে চাপিয়ে নিউ টাউনের দিক থেকে হলদিরাম হয়ে ফিরছিলেন শর্মিলা রায় নামে ওই মহিলা। কৈখালির কাছে মেট্রো রেলের কাজের জন্য রাস্তা এমনিতেই খানিকটা অপ্রশস্ত হয়ে রয়েছে। সেখানেই ডাম্পার ও স্কুটারটি খুব কাছাকাছি চলে আসে। যে কোনও ভাবেই হোক, চলন্ত অবস্থায় স্কুটারের হাতলের সঙ্গে ডাম্পারের ঘষা লেগে যায়। তাতে স্কুটারটি নিয়ন্ত্রণ হারালে শর্মিলা ও হিয়া রাস্তায় ছিটকে পড়েন। শর্মিলার পায়ে আঘাত লাগে। কিন্তু, ডাম্পারের চাকার নীচে পড়ে পিষে যায় ১২ বছরের হিয়া।
দুর্ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের দু’ধরনের মতামত পাওয়া গিয়েছে। এক দলের বক্তব্য, মা ও মেয়ে স্কুটার থেকে ছিটকে পড়ার পরে ডাম্পারটি পালাতে গিয়ে ওই কিশোরীকে চাপা দেয়। অন্য পক্ষের দাবি, ডাম্পারের কেবিন উঁচু হওয়ায় চালক বুঝতে পারেননি, গাড়ির নীচে যে মেয়েটি পড়ে গিয়েছে। সিগন্যাল সবুজ হওয়া মাত্র তিনি গাড়ি চালিয়ে দেন। এর পরেই হইচই শুরু হয়ে যায় রাস্তায়। উত্তেজিত জনতা ইট ছুড়ে ডাম্পারের কাচ ভেঙে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাগুইআটি থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করা হবে। তাঁর খোঁজ চলছে।
আকস্মিক এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান শর্মিলাদের প্রতিবেশীরা। তাঁরা জানান, শর্মিলা তাঁর মেয়েকে স্কুটারে নিয়েই যাতায়াত করতেন। নিউ টাউনের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। এ দিন প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষার শেষে মেয়েকে নিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। কিশোরীকে উদ্ধার করে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাটি ঠিক কী ভাবে ঘটেছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তা যাচাই করা হচ্ছে। স্কুটারটি ডাম্পারের বাঁ দিকে ছিল। সেটি ডাম্পারটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত ওই ছাত্রীর মাকে চিকিৎসার জন্য একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।