সেচ দফতরের বয়ান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। ফাইল ছবি।
কেষ্টপুর ও বাগজোলা খালপাড়ের জবরদখলকারীদের সরানো ঘিরে কি রাজ্য সরকারের দুই দফতরের মধ্যে পারস্পরিক দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে? এই প্রশ্নই উঠেছে খালের দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া রাজ্য সেচ দফতরের বয়ানকে কেন্দ্র করে।
ওই বয়ানে সেচ দফতর জানিয়েছে, জবরদখলকারীদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের একটি সার্বিক পরিকল্পনা দরকার। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে বহু মানুষ গৃহহীন হবেন। তাই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, স্থানীয় পুর প্রশাসন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ, পুরো বিষয়টির সঙ্গে নগর পরিকল্পনা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
সেচ দফতরের এই বয়ান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কেষ্টপুর ও বাগজোলা খালের জবরদখলকারীদের প্রসঙ্গ নতুন কিছু নয়। বাস্তব হল, খালের দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। তার পাঁচ বছর পরে, অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসে খালের দূষণ কমানো, খালপাড়ের দু’ধারের জবরদখলকারীদের সরানো, নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা-সহ সামগ্রিক কর্ম-পরিকল্পনা (অ্যাকশন প্ল্যান) তৈরির নির্দেশ দিয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দেয় আদালত। ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত সেই সময়ে জানিয়েছিল, খালের দূষণ কমানো নিয়ে রাজ্য সরকারের দফতরগুলির মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি সমন্বয়ের অভাবকেই স্পষ্ট করে তুলেছে। যার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে এক পরিবেশবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, একাধিক দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ওই পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘সেখানে এত দিন পরে এসে সেচ দফতরের এই বক্তব্য তো পুরনো ঘটনারই পুনরাবৃত্তি করল। যেখানে শুধুমাত্র দায় ঠেলাঠেলি রয়েছে, কাজের কাজ কিছু নেই!’’
মামলায় আদালতবান্ধব হিসাবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ মতো খালের দূষণ কমানো, জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হলফনামা জমা দিয়েছিলেন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। অথচ, সেখানে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ নিয়ে কোনও কথাই বলা হয়নি। সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পরিবেশ আদালতের বার বার নির্দেশ, ক্ষোভ প্রকাশের পরেও সেচ দফতরের এই হলফনামা জমা দেওয়ায় একটা ব্যাপারই পরিষ্কার। তা হল, জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিন্দুমাত্র কোনও মাথাব্যথাই নেই।’’
যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এই বক্তব্য পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। সেচ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, জবরদখলকারীদের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান একটা স্পর্শকাতর বিষয়। এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো করলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হতে পারে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেই সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জবরদখল নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে গা-ছাড়া মনোভাব থাকলে নিশ্চয়ই এই কাজগুলো করা হত না।’’