ফেলে আসা চপ্পলই ধরিয়ে দিল চোরকে

দোতলা ওই বাড়িটির যে খোলা জানলা দিয়ে চোর ঘরে হানা দিয়েছিল, সেটি কাঠের তৈরি। লোহার গ্রিলও নেই। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ অনুমান করে, চোর জানলার পাশের পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছিল। এর পরে পাইপের কাছে গিয়ে নীচে একটি হাওয়াই চপ্পল পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০২:১১
Share:

পড়ে থাকা এই হাওয়াই চপ্পলই ধরিয়ে দিল চোরকে। নিজস্ব চিত্র

রাতে চুরি করতে গিয়ে এক পায়ের হাওয়াই চপ্পলটি ফেলে চম্পট দিয়েছিল চোর। আর একটি চপ্পল পায়েই ছিল। কিন্তু তার মায়া কাটাতে পারেনি। দিনভর এক পায়ে সেই চপ্পল পরেই ঘুরছিল সে। আর সেটাই কাল হল তার। হাওয়াই চপ্পলের সূত্র ধরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল সেই চোর! পুলিশ জানিয়েছে, বছর উনিশের ওই যুবকের নাম শেখ রাকেশ। আলিপুর থানার পুলিশের কাছে তার স্বীকারোক্তি—‘‘চপ্পলটা কয়েক দিন আগেই কিনেছি। রাতে গিয়ে ফেলে আসা চপ্পলটা নিয়ে আসব ভেবেছিলাম। ধরা পড়ে যাব ভাবিনি!’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ। ওই সময়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে নিউ আলিপুরের শীতলাতলা রোডের বাসিন্দা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের মনে হয়, মৃদু আলোয় ঘরের মধ্যে কেউ ঘুরছে। চটকা ভাঙতে লক্ষ করেন, ওই ছায়ামূর্তি একতলার ঘরের পিছনের দিকের জানলা দিয়ে বাইরে উঁকিঝুঁকি মারছে। তখনই ‘ভূত ভূত’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন অরিন্দমবাবু। চিৎকারে ঘুম ভেঙে উঠে তাঁর স্ত্রী দেবশ্রী অবশ্য ‘চোর চোর’ বলে চেঁচাতে শুরু করেন। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘চেঁচাতেই ছেলেটা জানলা দিয়ে নীচে লাফ মেরে পালায়। আলো জ্বেলে দেখি, দুটো মোবাইল ফোন আর টাকার ব্যাগ নেই।’’ এর পরেই পুরনো একটি মোবাইল থেকে ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন তাঁরা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নিউ আলিপুর থানার তদন্তকারীরা। দোতলা ওই বাড়িটির যে খোলা জানলা দিয়ে চোর ঘরে হানা দিয়েছিল, সেটি কাঠের তৈরি। লোহার গ্রিলও নেই। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ অনুমান করে, চোর জানলার পাশের পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছিল। এর পরে পাইপের কাছে গিয়ে নীচে একটি হাওয়াই চপ্পল পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বুঝেছিলাম, এটা ‘স্পাইডার’ চোরের কাজ। নিউ আলিপুর এবং মাঝেরহাট রেল স্টেশনের মধ্যে খোঁজ করলেই চোরকে পাওয়া যাবে জানতাম। চপ্পলটাই ধরিয়ে দিয়েছে।’’ তদন্তে নেমে নিউ আলিপুর স্টেশনে গিয়ে পুলিশ দেখে, এক পায়ে চপ্পল পরে ঘুরছে এক তরুণ। তার চপ্পলের সঙ্গে চোরের ফেলে যাওয়া চপ্পলটি মিলে যেতে বুধবার তাকে হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টার কসুর করেনি রাকেশ। প্রথমে জেরায় সে জানায়, তার বাড়ি সোনারপুরে। চুরি করা মোবাইল দু’টি শিয়ালদহের এক ফল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাকে নিয়ে পুলিশ শিয়ালদহে গেলেও কাকে ওই ফোন বিক্রি করেছে, তা দেখাতে পারেনি। এ বার সে জানায়, চুরি করা জিনিস রয়েছে সোনারপুরের বাড়িতে। এর পরে সোনারপুরে গিয়েও প্রথমে পুলিশকে একটি ভুল বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয় রাকেশ।

যদিও শেষরক্ষা হয়নি। দীর্ঘ টালবাহানার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডোলারহাটে নিজের বাড়িতে পুলিশকে নিয়ে যায় রাকেশ। উদ্ধার হয় প্রায় ২০টি মোবাইল ফোন এবং টাকার ব্যাগটি। সেখানে থাকেন রাকেশের স্ত্রী ও সন্তান। তাঁরা অবশ্য জানেন, রাকেশ কলকাতার কোনও এক আবাসনে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement