‘শ্যাবি’-কে খাওয়াচ্ছেন এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার(বাঁ দিকে)। ‘শ্যাবি’-কে খুঁজে পাওয়ার পর অঙ্কিত গুপ্ত(ডান দিকে)।— নিজস্ব চিত্র।
সাত সকালে প্রিয় পোষ্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ফ্ল্যাট থেকে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তন্ন তন্ন করেও তার হদিশ মেলেনি। কিন্তু প্রিয় পোষ্যকে খুঁজে না পাওয়ার কথা পুলিশকেও জানাননি গুপ্ত দম্পতি। শেষ পর্যন্ত ‘শ্যাবি’-র হদিশ মিলল থানাতে। জানা গেল, গুপ্ত দম্পতি যখন শ্যাবির খোঁজে উদ্ভ্রান্ত, তখন সে থানার অন্দরে ‘লাঞ্চ’ সেরেছে আরামেই।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন দুপুরে। ফুলবাগান থানার সাব ইনস্পেক্টর শঙ্কর দত্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। দুপুর ৩ টে নাগাদ সিআইটি রোডের কাছে তাঁর চোখে পড়ে একটি ল্যাব্রাডর, বেশ উদভ্রান্ত হয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। প্রচণ্ড গরমে কাহিল দশা। তার উপর রাস্তার সারমেয় বাহিনী তেড়ে আসছে। কুকুরটিকে দেখেই শঙ্করবাবু বুঝতে পারেন সেটি কারও পোষা। কোনও ভাবে রাস্তা হারিয়েছে। তিনি তখন ল্যাব্রাডরটিকে পুলিশের গাড়িতে চাপিয়েই নিয়ে আসেন থানায়। ফুলবাগান থানার কর্মীরা জানিয়েছেন, সেখানে পৌঁছনো মাত্রই অফিসার্স রুমের মেঝেতে বসে পড়ে ল্যাব্রাডরটি। তাকে প্রথমে ঠান্ডা জল খাইয়ে কিছুটা চাঙ্গা করেন পুলিশকর্মীরা। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘কুকুরটাকে দেখেই মনে হচ্ছিল ওর খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আমরাই খাবারের ব্যবস্থা করেন। ওকে খাওয়ানোর ভার নেন থানারই এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার।”
ততক্ষণে ফুলবাগান থানার ওসির নির্দেশে পুলিশি প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই ল্যাব্রাডরটির ছবি তুলে পাঠানো হয় বিভাগীয় ডিসি-র অফিসে। ডিসিকে জানানো হয় গোটা ঘটনা। তারপর ডিসি ল্যাব্রাডরটির ছবি দিয়ে টুইট করেন।
আরও পড়ুন: বাসে উঠলেই দিতে হচ্ছে ১০ টাকা! বিরক্ত যাত্রীরা
এ দিন রাতে সেই টুইট দেখতে পান বিশ্বনাথ দাস নামে এক যুবক। তিনি দেখেই চিনতে পারেন ‘শ্যাবি’-কে। বিশ্বনাথ জানতেন, শ্যাবিকে খুঁজে অঙ্কিত গুপ্ত এবং তাঁর স্ত্রী প্রগতি। তাঁদের বাড়ি হরমোহন ঘোষ লেনে, থানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে । কলকাতা পুলিশের টুইট দেখে গুপ্ত দম্পতি চিনতে পারেন ‘শ্যাবি’-কে। রাতেই থানায় যান তাঁরা।
কিন্তু থানার জিম্মা থেকে পোষ্যকে ফেরত নেওয়ারও পুলিশি প্রক্রিয়া রয়েছে। পুলিশই বা কী ভাবে বুঝবে ওই ল্যাব্রাডরটি অঙ্কিত-প্রগতির?
থানা সূত্রে খবর, প্রথমে পুলিশকর্মীরা দেখেন অঙ্কিত এবং প্রগতিকে দেখে কুকুরটির ব্যবহারে কী পরিবর্তন হয়। দেখা যায়, সারাদিন অচেনা লোকজনের সামনে শান্ত হয়ে থাকলেও, প্রগতিকে দেখেই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে সে। ঝাঁপিয়ে প্রগতির কোলে চলে যায়। এতেই খানিকটা নিশ্চিন্ত হন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তখনও প্রক্রিয়ার একটা ধাপ বাকি।
গুপ্ত দম্পতিকে বলা হয়, কুকুরটির সঙ্গে তাঁদের কোনও ছবি আছে কি না? মোবাইলে তোলা ‘শ্যাবি’র সঙ্গে বেশ কয়েকটা ছবি দেখান ওই দম্পতি। এতোই পুলিশ ‘শ্যাবি’-র সঙ্গে গুপ্ত দম্পতির সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। ‘শ্যাবি’-কে তুলে দেওয়া হয় তাঁদের হাতে।
আরও পড়ুন: চিনা মাঞ্জা রুখতে মা উড়ালপুলে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি পুলিশের