জয়ী: হাসপাতালে মা কুসুম দাসের সঙ্গে আকৃতি। নিজস্ব চিত্র
তার বাঁ কানের পিছনে ছোট্ট একটি টিউমার নজরে পড়েছিল বড়দের। কিন্তু ৯ বছরের মেয়েটি তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। পরীক্ষায় জানা যায়, লালাগ্রন্থির এক ধরনের ক্যানসার ‘মিউকোএপিডারময়েড কার্সিনোমা প্যারোটিডে’ আক্রান্ত ওই বালিকা। যার একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। সেই অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ, চনমনে আছে ৯ বছরের আকৃতি দাস।
পিকনিক গার্ডেনে দু’কামরার ফ্ল্যাটে দাদু, দিদিমা, মা কুসুম দাস আর মাসি পূজা লালের সঙ্গে থাকে আকৃতি। স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আকৃতির যখন তিন বছর বয়স, তখন তার বাবা মারা যান। সেই থেকে দাদু আর মাসির রোজগারই মা-মেয়ের ভরসা। পূজা পেশায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স। ওই টিউমারটি দেখে তিনিই বোনঝিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সেটি বড় হচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে।
সেই মতো নজর রেখে দেখা যায়, টিউমারটি বাড়ছে। পূজা জানাচ্ছেন, বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে শুধু বাইরের অংশটুকু কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এর পরে বায়োপসি রিপোর্ট আসে ‘লো গ্রেড কার্সিনোমা’। তখন পরিজনেরা আকৃতিকে পিয়ারলেস হাসপাতালে নিয়ে গেলে ফের কিছু পরীক্ষার পরে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা।
উল্লেখ্য, মানবদেহের বৃহত্তম লালাগ্রন্থি এই প্যারোটিড। যা থাকে কানের পাশে। সেখান থেকে নালিপথে লালারস আসে মুখে। প্যারোটিডের দু’টি ভাগ— সুপারফিশিয়াল এবং ডিপ। আকৃতির ক্ষেত্রে টিউমার কাটতে বাদ দিতে হয়েছে সুপারফিশিয়াল অংশটি। এই পদ্ধতিকে বলে ‘সুপারফিশিয়াল প্যারোটিডেক্টমি’। আকৃতির অস্ত্রোপচার যিনি করেছেন, সেই ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “মিউকোএপিডারময়েড কার্সিনোমা প্যারোটিড বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচরাচর শোনা যায় না। এই অস্ত্রোপচারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, সুপারফিশিয়াল এবং ডিপের মাঝে থাকা মুখের স্নায়ুতে আঘাত লাগলে চেহারায় বিকৃতি ঘটার আশঙ্কা থাকে। আকৃতির তেমন কিছু হয়নি। তাকে রেডিয়েশনও দিতে হয়নি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে সে।”
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি-র বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক ইন্দ্রনাথ কুণ্ডু বলছেন, “বড়দের তুলনায় ছোটদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্যানসারের কথা অনেক কম শোনা যায়। সেই সঙ্গে এর অস্ত্রোপচারে মুখবিকৃতির আশঙ্কা থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেই ভয় আরও বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে এমন সাফল্য অনেকের মনোবল বাড়াবে।’’
পূজা বলছেন, “আমার বাবা একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। স্বামী কর্মসূত্রে থাকেন ভিন্ রাজ্যে। তাই আমি মা-বাবার সঙ্গে থাকি। যা কিছু আমাদের সঞ্চয় ছিল, বোনঝির চিকিৎসায় সব ধাপে ধাপে খরচ হয়ে গিয়েছে। তবু বলব, ও যে সুস্থ হয়ে ফিরেছে, সেটাই আমাদের কাছে সব চেয়ে আনন্দের।”