West Bengal Panchayat Election 2023

টোটোচালক পালালেন গুলির ভয়ে, পুলিশকে ডেকেও পেলাম না

বহিরাগতদের শাসানি থেকে গার্ডরেল দিয়ে ভোটকেন্দ্র ঘেরা— পঞ্চায়েত ভোটে সরগরম ছিল নিউ টাউন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, মঙ্গলবার হাই কোর্টের নির্দেশের পরে ফিরে দেখলেন এক ভোটার।

Advertisement

জয়শ্রী মৈত্র

নিউ টাউন শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৬:০৯
Share:

অবরুদ্ধ: গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউ টাউনের এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা। ছবি: সুমন বল্লভ।

পঞ্চায়েত ভোটের দিনের সেই সকালটা বহু বছর মনে থাকবে। শহরে থাকি। তবুও পঞ্চায়েত ভোট কেন, সেই প্রশ্ন মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু ভোট যখন হচ্ছেই, তখন গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা আমার দায়িত্ব। তাই সকালে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে টোটোয় চেপে রওনা দিয়েছিলাম।

Advertisement

আমার বয়স ৬০। নিউ টাউনের বিবি ব্লকে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে রয়েছি। এলাকার আদি বাসিন্দাই বলা যায়। এত বছর ভোট দিয়েছি, কিন্তু শহরাঞ্চলে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হবে, বুঝিনি।

আত্মীয়ের বাড়ি থেকে টোটোয় করে ভোট দিতে যাচ্ছিলাম ঠিকই, তবে আমার বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্র আব্দুল কালাম কলেজের দূরত্ব বেশি নয়। কিন্তু ভোটকেন্দ্র তো দূর স্থান, দুষ্কৃতীদের লোহার গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়ার জায়গাটুকু পর্যন্তও পৌঁছতে পারিনি। ভোটকেন্দ্রের দিকে যেতে দেখেই রে রে করে তেড়ে এলেন একদল যুবক। জানতে চাইলেন, কোথায় যাচ্ছি? বললাম, ভোট দিতে যাব। ওঁরা সাফ জানালেন, ভোট দিতে যাওয়া যাবে না। পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, কেন যাব না? এর জবাবে বললেন, ‘‘ভোট দিতে যাবেন না মানে যাবেন না। ভাল চান তো এখান থেকে চলে যান।’’ এমনকি, তর্ক জুড়েছি দেখে টোটোচালককে গুলি করার হুমকিও দিলেন তাঁরা। টোটোচালককে বললেন, সেখান থেকে চলে যেতে। আমি ততক্ষণে সেই হুমকি শুনে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছি।

Advertisement

আমার সামনে তখন ১০-১২ জন ছেলে। দূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আরও অনেকে। ওঁরা যে কেউ নিউ টাউনের বিবি ব্লকের বাসিন্দা নন, তা আমি হলফ করে বলতে পারি। আমি শাসকদলের বিরোধী রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নই। কিন্তু ওই যুবকেরা তো সে সব জানেন না! ওই দিন শুধু আমাকে নয়, আমার বহু প্রতিবেশীকেও একই ভাবে আটকানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে তৃণমূলের সমর্থকও ছিলেন।

টোটোচালককে যখন ওঁরা ধমকাচ্ছেন, গুলি করার হুমকি দিচ্ছেন, তখন অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের মধ্যে এক জন মহিলা। তাঁদের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা জানালেও নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁরা। ছেলেগুলিকে সামান্য ধমক দেওয়ার সাহসও দেখাননি।

শেষে টোটোচালককে বললাম, আমায় বাড়ির সামনে নামিয়ে দিতে। সেই মতো টোটোর মুখ ঘুরিয়ে খানিকটা যেতেই ফের ধেয়ে এলেন যুবকেরা। ভয়ে টোটোচালক আমায় রাস্তায় নামিয়ে পালিয়ে গেলেন। আমি হাঁটতে হাঁটতে সোনার কেল্লা পার্কের দিকে পৌঁছেছি, তখন আরও একটি দল ঘিরে ধরল। জানাল, ভোট দিতে যাওয়া চলবে না। এমনকি অসম্মান করে কথা বলাও শুরু করল। বিবি ব্লকে আমার বাড়ির দিকে এগোতে গিয়ে দেখি, সেখানেও ছেলেদের জটলা। তাঁদের সামনে আর সাহস করে বলতে পারিনি যে, ভোট দিতে চাই। গোটা বিবি ব্লক তখন বহিরাগতদের দখলে। বাধ্য হয়ে ক্যাবে করে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলাম।

অনুলিখন: প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement