—প্রতীকী চিত্র।
এই রাজ্য-সহ গোটা পূর্বাঞ্চলে ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়তে সরকারি ও বেসরকারি স্তরের সমন্বয় জরুরি। পরিকাঠামো, ব্যবস্থাপনা থেকে সব কিছুতেই পারস্পরিক আদানপ্রদান না থাকলে ক্যানসার চিকিৎসার উন্নতি সম্ভব নয়। শনিবার মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালের আলোচনাসভায় এমনই মত উঠে এল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়।
শহরের এক হোটেলে ‘রাজ্য তথা পূর্বাঞ্চলে কী ভাবে ক্যানসার চিকিৎসার উন্নতি করা যায়’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজক ছিল মেডিকা ক্যানসার হাসপাতাল। অংশ নেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী, মেডিকা ক্যানসার হাসপাতালের উপদেষ্টা ও চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (সিএনসিআই)-এর অধিকর্তা জয়ন্ত চক্রবর্তী, ঠাকুরপুকুরের সরোজ গুপ্ত ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত ও রাজারহাটের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের অধিকর্তা পি অরুণ। সঞ্চালনায় ছিলেন মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের উপ-অধিকর্তা পঙ্কজ চতুর্বেদী।
ক্যানসারের চিকিৎসার গোড়াতেই যে রোগ নির্ণয়ের উপরে রাজ্য সরকার জোর দিচ্ছে, তা এ দিন জানান স্বাস্থ্যসচিব। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরায়ুমুখ, স্তন ও মুখের ক্যানসার চিহ্নিতকরণ প্রকল্প থেকে শুরু করে জেলার হাসপাতালেই ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি। জানা যায়, এসএসকেএম ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসার চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলতে রাজ্য এবং টাটা মেমোরিয়াল গাঁটছড়া বেঁধেছে। টার্সিয়ারি কেয়ার সেন্টার হচ্ছে কামারহাটির সাগর দত্ত, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। আঞ্চলিক কেন্দ্র হচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। স্বাস্থ্যসচিব জানান, বিগত ছ’বছরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ক্যানসারের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পে দৈনিক ৬০০ জন কেমোথেরাপি নেন। এখানেই প্রশ্ন তোলেন অন্যেরা। কারণ, আলোচনায় উঠে আসে, স্বাস্থ্যসাথীতে ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ মেলায় সরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমেছে। বেসরকারিতে ভিড় হচ্ছে। আলোচনায় অনেকেই প্রস্তাব দেন, প্রয়োজন ছাড়াও প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ বা প্রকল্পকে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনের মতো বিষয়গুলি আটকানো প্রয়োজন। এমন ক্ষেত্রে অডিটের প্রস্তাব দেন অর্ণব।
আবার স্বাস্থ্যসাথীতে শুধু বিনামূল্যে চিকিৎসা না দিয়ে বিনিয়োগ থেকেও কিছু আয়ের বন্দোবস্ত করে তা জনস্বাস্থ্যের কাজে খরচের
প্রস্তাব দেন পঙ্কজ। যদিও স্বাস্থ্যসচিব জানান, সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়াই সরকারি নীতি। সমাজ ও জনস্বাস্থ্যে ক্যানসারের গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখতে এই রোগের রেজিস্ট্রির কথা বলেন জয়ন্ত। যা শুরু হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য-অধিকর্তা। সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসায় ড্রপ-আউটের সংখ্যা কমাতে সরকারি নজরদারির কথা বলেন সুবীর। প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের পরিচয়পত্র ও রাতে হাসপাতালে থাকার বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেন তিনি। সুবীর বলেন, ‘‘সরকার স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এক জন রোগীর আসা, খাওয়া ও থাকাতেই কয়েক হাজার টাকা লেগে যায়। তাই এমন পরিষেবাগুলিও চালু হওয়া প্রয়োজন।’’