প্রতীকী ছবি।
আর কত হাস্যকর হবে কলকাতার মেট্রোর পরিষেবা?
রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪১ মিনিট। মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে কবি সুভাষগামী মেট্রোর লাইন ধরে সুড়ঙ্গ দিয়ে ছুটতে লাগলেন এক ব্যক্তি। যাত্রী থেকে মেট্রোকর্মী সকলের যখন হুঁশ ফিরল, তত ক্ষণে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে স্টেশন জুড়ে। তড়িঘড়ি সেন্ট্রাল থেকে গিরিশ পার্কের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রোর বিদ্যুৎ সংযোগ। কিন্তু ওই ব্যক্তির থামার নাম নেই। অন্ধকার পথেই সুড়ঙ্গ ধরে ছুটে চললেন তিনি! শেষে উঠলেন গিরিশ পার্কে স্টেশনে। কোনও মতে ভিড়ের ফাঁক গলে স্টেশন পেরিয়ে বেরিয়েও গেলেন! নজরে পড়ল না কারও। শুধু মেট্রোর সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ল, যিনি ছুটছিলেন তিনি গিরিশ পার্কের প্ল্যাটফর্মে উঠেছেন সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে!
শুধু কলকাতাই নয়, এ দেশের মেট্রোর ইতিহাসে এমন ঘটনা কবে, কোথায় ঘটেছে বা আদৌ ঘটেছে কি না, রাত পর্যন্ত মনেই করতে পারলেন না কেউ। অনেকে বলছেন, মেট্রোর সুরক্ষা ব্যবস্থা যে কতটা হাস্যকর তা এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে। অনেকের আবার চিন্তা, মহাত্মা গাঁধী রোড স্টেশন থেকে ওই ব্যক্তি যে লাইন ধরে ছুটছিলেন সেই পথেই তো ওই স্টেশনে মেট্রো আসার কথা। রেকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লেগে বা থার্ড রেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তো এ দিন আরও একটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারত। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেছেন, ‘‘গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনে থার্ড রেলে বিপত্তি হওয়ায় ট্রেন চলাচল থমকে গিয়েছিল।’’
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ মহাত্মা গাঁধী মেট্রো স্টেশনে আরপিএফ কর্মীরা উপযুক্ত টোকেন না থাকার কারণে এক ব্যক্তিকে আটকান। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি আরপিএফের হাত ছাড়িয়ে লাইনে নেমে যান। চিৎকার শুরু হয় স্টেশন জুড়ে। তার মধ্যেই ওই ব্যক্তি লাইন ধরে ছুটতে শুরু করেন গিরিশ পার্কের দিকে। তড়িঘড়ি পার্ক স্ট্রিটের কন্ট্রোল রুমে ফোন যায়। সেন্ট্রাল থেকে গিরিশ পার্কের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’টি লাইনেই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
৭টা ৫৭ মিনিট নাগাদ ওই ব্যক্তি গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও ওই ডাউন লাইনের থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা যাচ্ছিল না। এর জেরে প্রাথমিক ভাবে প্রায় ২০ মিনিট শহরের মেট্রো পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর জেরে বিভিন্ন স্টেশনে একের পর এক মেট্রো দাঁড়িয়ে যায়। পরে ময়দান থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। তবে সেন্ট্রাল থেকে গিরিশ পার্কের মধ্যে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এক যাত্রী বলেন, ‘‘ছুটির দিন বলে রক্ষা। কাজের দিন হলে কী হত? বছরের প্রথম রবিবার অনেকে তো ঘুরতেও বেরিয়েছেন।’’ আর এক যাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘ভাড়া বাড়ানোর পরেও কি মেট্রোর হাল ফিরবে না?’’
মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দুর্ঘটনা এড়াতেই মেট্রো চলাচল তখনকার মতো বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পরে দ্রুত সংযোগ আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। এর জেরেও পরিষেবা স্বাভাবিক করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। একই সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে, এক ব্যক্তি মেট্রোর সুড়ঙ্গে নেমে তাঁদের ঘোল খাইয়ে বেরিয়েই বা গেলেন কী করে? পুলিশ থেকে
আরপিএফ-ই বা সেই সময়ে কী করছিল? মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, স্টেশনগুলির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাফিলতি কার, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।