—ফাইল চিত্র।
খুনের আগে মাদক খাইয়ে কি বেহুঁশ করা হয়েছিল যুবককে? তার পরেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন? ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়ায় বছর ২৯-এর যুবক উৎসব মণ্ডলের রহস্য-মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্যই উঠে আসছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে ওই যুবককে কেন খুন করা হল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ধৃত স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ধৃত রিঙ্কি পালকে বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘স্বামীকে খুনের পরে নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছিল অভিযুক্ত। এর পরে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দেখানোর চেষ্টা করে সে। খুনের
কারণ জানতে ধৃতকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। তা মঞ্জুর হয়েছে।’’
উৎসবের মৃত্যু হয় গত সোমবার। প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল মৃতের স্ত্রী রিঙ্কি। কিন্তু মঙ্গলবার ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে আসতেই তার সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। উৎসবের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই গ্রেফতার করা হয় রিঙ্কিকে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই মাদকাসক্ত ছিলেন। নিয়মিত মাদক নিতেন তাঁরা। গত নভেম্বরেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। যদিও রিঙ্কিকে বিয়ে করা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল উৎসবের পরিবারে। কারণ, রিঙ্কির আগের পক্ষের একটি সন্তান রয়েছে। উৎসবদের সঙ্গেই থাকছিল রিঙ্কির সেই ছেলে। তবে উৎসবের দেহ উদ্ধারের সময়ে ওই ঘরে রিঙ্কিকে পাওয়া গেলেও তখন সেখানে তার ছেলে ছিল না। বিয়ের পরে প্রথম দিকে ওই দম্পতি আলাদা থাকছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ইদানীং উৎসবের আয় না থাকায় দিন দশেক আগে চক্রবেড়িয়ার পৈতৃক বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। বাজারে মোটা টাকা দেনাও ছিল তাঁর। প্রতিবেশীদের দাবি, নানা বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই দম্পতির মধ্যে অশান্তি হত।
ঘটনার দিন সোমবার, একাধিক বার ছেলেকে ফোন করেছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু প্রতি বারই রিঙ্কি ফোন ধরে জানায়, উৎসব ঘুমোচ্ছে। এমনটাই দাবি মৃতের পরিবারের। পুলিশের অনুমান, খুনের আগে অত্যধিক পরিমাণে মাদক খাওয়ানো হয়েছিল ওই যুবককে। তার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। মাদকাসক্ত হওয়ায় বাধা দিতে পারেননি উৎসব। খুনে তৃতীয় ব্যক্তির যুক্ত থাকার প্রমাণ এখনও মেলেনি বলেই খবর। তবে তেমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
কেন এই খুন? আপাতত সেই উত্তরই খুঁজছেন তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, খুনের পিছনে বিবাহ-বহির্ভূত কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। এ সবের পাশাপাশি দম্পতির মধ্যে বিরোধের কারণ কী ছিল, তা জানতে রিঙ্কির পরিবারের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কথা বলছেন।