—প্রতীকী চিত্র।
বিপুল খরচ করে বিলাসবহুল গাড়ি কিনলেও তার জন্য নির্দিষ্ট পথকর মেটানোর ক্ষেত্রে অনীহা আছে ওই সব গাড়ির মালিকদের একটি বড় অংশের। গাড়ি কেনার সময়ে এককালীন পাঁচ বছরের জন্য যে পথকর দিতে হয়, তা দিলেও পরের দিকে কোনও রকম কর না দিয়েই দিব্যি শহরের রাস্তায় ওই সব গাড়ি নিয়ে তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। বিত্তশালী লোকজনের বহুমূল্য, বিলাসবহুল গাড়ি দেখে বহু ক্ষেত্রে পুলিশও ওই সব গাড়ির নথি দেখতে চায় না বলে জানা যাচ্ছে। তারই সুযোগ নিয়ে গাড়ির মালিকদের একাংশ বছরের পর বছর বহু লক্ষ টাকা কর বাকি রেখেই ওই সব গাড়ি নিয়ে ঘুরছেন।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখতে গিয়ে মাসখানেক আগে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা রীতিমতো চমকে ওঠেন। দফতর সূত্রের খবর, ২০ লক্ষ টাকার বেশি দামি, এমন প্রায় ৪৫০০ গাড়ির মালিক পথকর মেটাননি। পরে এ নিয়ে ধরপাকড় শুরু হওয়ায় প্রায় ১৫০০ গাড়ির মালিক জরিমানা-সহ কর মিটিয়ে গিয়েছেন বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। ওই সব গাড়ির মধ্যে সাফারি, রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড রোভার, পোর্শে, ল্যাম্বরগিনির মতো অজস্র মূল্যবান গাড়ি রয়েছে। অভিযোগ, ওই সব গাড়ির মালিকদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চিত্রতারকারা। পরিবহণ আইন অনুযায়ী, পথকর না মেটালে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোনো যায় না। যাঁরা কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাঁদের অনেকের গাড়ি সংস্থার নামে কেনা বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। গাড়ির পথকর ছাড়াও জরিমানা ধরে বহু গাড়ির ক্ষেত্রে ১০-১২ লক্ষ টাকারও বেশি কর বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের কাছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাছাকাছি কর বাকি রয়েছে বলে অভিযোগ।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি অবহেলিত হলেও এ বার কর আদায়ের ক্ষেত্রে নড়েচড়ে বসেছে পরিবহণ দফতর। গাড়ি চিহ্নিত করে বিস্তারিত তালিকা তৈরি ও রাস্তায় দফতরের আধিকারিকদের মাধ্যমে অভিযান চালানো ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই সব গাড়ির গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে রাজ্য সরকার। এই সব গাড়ির মালিকদের কড়া বার্তা দিতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের মাধ্যমে তাঁদের বাড়িতে সরাসরি বকেয়া আদায়ের জন্য চিঠি পাঠানোর কথা ভেবেছে পরিবহণ দফতর। চিঠিতে কাজ না হলে রাস্তায় গাড়ি আটক করার মতো পদক্ষেপও করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।
এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো কর বাকি
রয়েছে ওই সব গাড়ির মালিকদের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘বকেয়া কর সম্পর্কে গাড়ির মালিকদের আগে অবহিত করার জন্য নথিভুক্ত নম্বরে এস এম এস পাঠানো হয়েছে। তাতে অনেকে সাড়া দিয়ে কর মিটিয়ে গিয়েছেন।’’ পরে তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, ‘‘গাড়ি কেনার সময়ে এককালীন ১৫ বছরের কর নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে রাজ্য সরকার।’’