Labrador Dog

মাঝগঙ্গা থেকে উদ্ধার ‘টাইগার’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বারেন্দ্রপাড়া ঘাটের কাছে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বাবলি হালদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০৩:১৫
Share:

উদ্ধারের পরে টাইগার। নিজস্ব চিত্র

ভাটার টানে ভেসে যাচ্ছিল ‘টাইগার’!

Advertisement

দেশে লকডাউন ঘোষণার পরের সকালে প্রায় মাঝগঙ্গায় তাকে দেখেন এক জেলে। দ্রুত ডিঙি নৌকায় চেপে তিনি দুই সঙ্গীকে নিয়ে পৌঁছে যান টাইগারের কাছাকাছি। সামনের দু’পা দিয়ে সাঁতরে ভেসে থাকার চেষ্টা করছিল সে। অনেক চেষ্টার পরে স্বাস্থ্যবান টাইগারকে নৌকায় তুলতে পারেন ওই যুবকেরা। তত ক্ষণে বেশ খানিকটা জল খেয়ে ফেলেছে সে। এক পশুপ্রেমীর বাড়ি নিয়ে গিয়ে শুরু হয় তার চিকিৎসা।

কিন্তু ‘টাইগার’ কার? খোঁজ পেতে ফেসবুকে দেওয়া হয় তার ছবি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল সেটি। সেই সূত্র ধরেই রাতে পৌনে দু’বছরের ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর টাইগারের মালিকের খোঁজ মেলে। বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে বালিতে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বারেন্দ্রপাড়া ঘাটের কাছে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বাবলি হালদার। আচমকা তিনি দেখেন, একটি কুকুর হাবুডুবু খাচ্ছে। বাবলি বলেন, ‘‘অনেককে গঙ্গা থেকে বাঁচিয়েছি। কুকুরটাকে দেখেও মনে হল বাঁচানো দরকার।’’ টাইগারের কাছে পৌঁছে প্রথমে একটি দড়ি ছুড়ে দেন বাবলিরা। কিন্তু গলায় ফাঁস লেগে যাওয়ার আশঙ্কায় বাবলির এক সঙ্গী জলে ঝাঁপ দিয়ে কোনও মতে জাপটে ধরেন টাইগারকে। নৌকার কাছে টেনে আনতে টাইগার নিজেই লাফিয়ে উঠে পড়ে। কাদা মাখা অবস্থায় তাকে আনা হয় বারেন্দ্রপাড়ারই এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখানে গরম জল, শ্যাম্পু দিয়ে টাইগারকে স্নান করানো হয়। দুপুরে ভাত-মাছ খাওয়ার পরে সে বমি করে ফেলে। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, পশুপ্রেমী তন্দ্রা লাহিড়ী চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসক স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দিলে তন্দ্রাদেবী সেই ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় যুবক সপ্তর্ষি বৈশ্য টাইগারের ছবি ও ঘটনাটি ফেসবুকে দেন। বালি থানাতেও জানান। ফেসবুক দেখে রাতে বরাহনগরের এক বাসিন্দা সপ্তর্ষিকে জানান, বালির কালীতলায় তাঁর ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই এলাকায় এক ব্যক্তির সঙ্গে টাইগারকে দেখেছেন তিনি। কালীতলায় খোঁজ শুরু করার পরে জানা যায়, টাইগার সেখানকার বাসিন্দা, এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সঞ্জয় দাসের পোষ্য।

সঞ্জয়ের প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই পোষ্যদের মারধর করতেন তিনি। সঞ্জয়ের দাবি, কখনও কখনও তিনি টাইগারকে গঙ্গায় স্নান করাতে নিয়ে যেতেন। বুধবার সকালেও গিয়েছিলেন। তবে বাড়িতে ফেরার পরে দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে যায় টাইগার। ওই যুবকের দাবি, ‘‘পাড়ায় টাইগারকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। তখন কয়েক জন বলেন, ওকে গঙ্গার দিকে যেতে দেখেছেন।’’ প্রতিবেশীদের পাল্টা প্রশ্ন, জি টি রোড পেরিয়ে গলি দিয়ে গিয়ে কী ভাবে গঙ্গায় নামল টাইগার? আর তাকে না পেয়ে থানায় জানালেন না কেন সঞ্জয়? এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি সঞ্জয়।

বুধবার রাতে সঞ্জয়কে দেখে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়ে টাইগার। পরে তাঁর স্ত্রী বেবিকে দেখে বেরিয়ে আসে। তাকে ফিরিয়ে আনার সময়ে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আর কখনও শাস্তি দেব না। ঠিক ভাবে নজর রাখব।’’ সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘উনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা মাঝেমধ্যে গিয়ে টাইগারের খোঁজ নেব।’’

রাত সাড়ে ১২টায় বাড়ি ফিরে অবশ্য সব ঘটনা ভুলে পাঁচ মাসের স্প্যানিয়েল টিটুনের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে টাইগার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement